যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। সম্প্রতি দেশটির অর্থনীতিতে ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়া এবং বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব বাণিজ্য এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো দেশটির ভোক্তারা। তাদের ব্যয়ের ওপর দেশটির জিডিপির প্রায় ৭০ শতাংশ নির্ভর করে। কিন্তু বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধি, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক এবং শেয়ার বাজারের অস্থিরতার কারণে মার্কিন ভোক্তাদের মধ্যে ব্যয় করার প্রবণতা কমছে। ডেল্টা এয়ারলাইন্সসহ বিভিন্ন কোম্পানি তাদের মুনাফা কমার পূর্বাভাস দিয়েছে, যা উদ্বেগের কারণ। খুচরা বিক্রেতাদের শেয়ার সূচকও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক আরোপের পর তা প্রত্যাহার করা হলেও, চীনের ওপর শুল্কের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। নতুন করে কানাডা থেকে বিদ্যুৎ এবং ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এই শুল্ক নীতি ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়ে, তবে সেই পণ্যের সরবরাহকারী দেশগুলোর রপ্তানি কমে যেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য সহযোগী। দেশটির অর্থনীতিতে কোনো ধরনের মন্দা দেখা দিলে, তার সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে পড়তে পারে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সুযোগও হতে পারে। বিশ্ববাজারে নতুন করে ব্যবসা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে যদি বাংলাদেশ তার উৎপাদন খরচ কমাতে এবং পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে পারে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের চাহিদা পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করার সুযোগও রয়েছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনগুলো বিবেচনা করে বাংলাদেশের বাণিজ্য নীতি এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন