মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গবেষণা চলছে, যেখানে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার বা ‘আলট্রা-প্রসেসড ফুড’-এর স্বাস্থ্য ঝুঁকি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানতে চাইছেন, এই ধরনের খাবার মানুষের শরীরে কতটা প্রভাব ফেলে।
সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, এই খাবার অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়ায় এবং এর ফলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (এনআইএইচ)-এর একটি হাসপাতালে প্রায় এক মাস ছিলেন। সেখানে তাঁদের খাদ্যতালিকা ছিল বিশেষভাবে তৈরি করা অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার। তাঁদের স্বাস্থ্য এবং শরীরে ক্যালোরির হিসাব নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল, এই ধরনের খাবার খাওয়ার ফলে মানুষ বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করে কিনা এবং এর ফলস্বরূপ ওজন বাড়ে কিনা, যা পরবর্তীতে স্থূলতা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
গবেষণায় অংশ নেওয়া একজন হলেন ২০ বছর বয়সী স্যাম শ্রীসাত্তা। তিনি বলেন, “একদিন দুপুরের খাবারে ছিল চিকেন নাগেট, চিপস এবং কিছু কেচাপ। খাবারগুলো বেশ উপভোগ্য ছিল।”
গবেষণার প্রধান, এনআইএইচ-এর পুষ্টি গবেষক কেভিন হল বলেন, “আমরা বুঝতে চাই, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে কী ধরনের পরিবর্তন হয়। এর মাধ্যমে আমরা এই প্রক্রিয়াটি আরও ভালোভাবে জানতে পারব।”
এই গবেষণায় রোগীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করা হয়েছে, যেখানে তাঁরা কত ক্যালোরি গ্রহণ করছেন, তা সরাসরি পরিমাপ করা হয়েছে। অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারে ফ্যাট, চিনি ও লবণের পরিমাণ বেশি থাকে, যা শরীরে দ্রুত ক্যালোরি যোগ করে। এইসব খাবারে প্রায়ই এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয়, যা বাড়িতে তৈরি খাবারে পাওয়া যায় না। উদাহরণস্বরূপ, বাজারে সহজলভ্য চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস, কোমল পানীয় ইত্যাদি অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের অন্তর্ভুক্ত।
গবেষণার প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীরা যখন অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়েছেন, তখন তাঁরা প্রায় ১০০০ ক্যালোরি বেশি গ্রহণ করেছেন, যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তবে, খাবারের উপাদান পরিবর্তন করার পর ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ কমে আসে।
বোস্টন চিলড্রেন’স হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ড. ডেভিড লুইডগ এই গবেষণার সময়কাল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, এই ধরনের স্বল্পমেয়াদী গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল সবসময় সঠিক নাও হতে পারে। কারণ, মানুষের খাদ্যাভ্যাস স্বল্প সময়ের জন্য পরিবর্তন করা সহজ, কিন্তু সেই পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী হয় না। লুইডগ মনে করেন, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা উচিত।
মার্কিন স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রও পুষ্টি এবং খাদ্য বিষয়ক রোগ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন। তিনি বিশেষ করে শিশুদের স্কুল টিফিনে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার বন্ধ করার কথা বলেছেন।
বর্তমানে, এনআইএইচ বছরে প্রায় ২০০ কোটি ডলার পুষ্টি গবেষণায় ব্যয় করে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যতে এই ধরনের গবেষণা আরও বাড়ানো হবে, যাতে খাদ্যাভ্যাস এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। এই গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার এবং ফাস্ট ফুডের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে।
তথ্যসূত্র: