যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ক নীতিমালায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বেশ কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে দেশটির নেওয়া পদক্ষেপগুলো দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) সম্প্রতি জানিয়েছে যে, তারা কার্বন ডাই অক্সাইডসহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিনা, সেই সংক্রান্ত তাদের আগের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে। ২০০৯ সালে ইপিএ’র করা এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল যে, গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের পর ইপিএকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং এই সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করেই দূষণ কমানোর জন্য বিভিন্ন নিয়ম তৈরি করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে, গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে জলবায়ু সংকট আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
ইপিএ প্রশাসক লি জেলডিন বলেছেন, তাদের সংস্থা এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে, কারণ তাদের উদ্বেগের বিষয় হলো এই সিদ্ধান্ত “আমাদের শিল্প, আমাদের গতিশীলতা এবং ভোক্তাদের অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করে এবং বিদেশি প্রতিপক্ষদের সুবিধা দেয়”। তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপ “আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডি-রেগুলেশনের দিন”। জেলডিন আরও জানান, তাদের মূল লক্ষ্য হলো “গাড়ি কেনা, বাড়ি গরম করা এবং ব্যবসা পরিচালনার খরচ কমানো”।
তবে পরিবেশবাদীরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছেন। তারা বিজ্ঞানসম্মত তথ্যের ভিত্তিতে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভার্সিটির লিগ্যাল ডিরেক্টর জেসন রাইল্যান্ডার বলেন, “ট্রাম্প প্রশাসনের অজ্ঞতা পৃথিবীর প্রতি তাদের বিদ্বেষের কাছে নতি স্বীকার করেছে। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো।”
ইপিএ একইসঙ্গে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত দূষণ কমানোর জন্য বাইডেন প্রশাসনের নেওয়া একটি পরিকল্পনা বাতিল করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া, তারা গাড়ির দূষণ মান নিয়েও নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বায়ুদূষণ সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করারও আলোচনা চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষণ বিষয়ক নিয়মকানুন শিথিল করার এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে তা ১৯৭০-এর দশকের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশের ওপর সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলবে। উল্লেখ্য, ১৯৭০-এর দশকে দূষণ কমাতে ব্যাপক আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মহাসড়ক এবং শিল্পকারখানা থেকে নির্গত দূষণ হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ। এর মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে এবং ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও তীব্র তাপপ্রবাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হয়।
মমস্ ক্লিন এয়ার ফোর্সের পরিচালক ডমিনিক ব্রাউনিং বলেন, “জেলডিনের ইপিএ আমেরিকাকে সেই দিনগুলোতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যখন দূষণের কারণে মানুষ মারা যেত। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক। আমরা আমাদের শিশুদের রক্ষা করার জন্য এই নিষ্ঠুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করব।”
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশেও মারাত্মক। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং লবণাক্ততার বিস্তার বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ। ট্রাম্প প্রশাসনের এই ধরনের সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি আরও বাড়াবে, যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য একটি অশনি সংকেত।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য যে ২০ বিলিয়ন ডলারের অনুদান দেওয়ার ঘোষণা করেছিল, তাও স্থগিত করা হয়েছে। প্রাক্তন ইপিএ প্রশাসক জিনা ম্যাকার্থি এই সিদ্ধান্তকে ‘ভয়ংকর’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান