ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের মাদক বিরোধী যুদ্ধের শিকার পরিবারগুলো এখনো ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) দুতার্তের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর তাঁদের মনে কিছুটা হলেও আশা জেগেছে।
২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দুতার্তের শাসনামলে মাদক নির্মূলের নামে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নিহতদের সংখ্যা ৭ হাজারের বেশি। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই সংখ্যা ৩০ হাজারের কাছাকাছি। নিহতদের মধ্যে ছিলেন সাধারণ মানুষ, যাদের অনেকেই মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
কুইজন সিটির বাসিন্দা লোরি পাসকো-র দুই ছেলে ক্রিসান্তো এবং হুয়ান কার্লোস ২০১৭ সালের মে মাসে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন। একদিন পর তাঁদের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। পুলিশের দাবি ছিল, তাঁরা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে পাসকো-র পরিবার এই অভিযোগ অস্বীকার করে। ছেলেদের মৃত্যুর জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছেন। দুতার্তের গ্রেপ্তারের খবরে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “অনেক বছর অপেক্ষার পর অবশেষে কিছু একটা হচ্ছে। আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল।”
আরেক ভুক্তভোগী ক্রিস্টিন পাসকুয়ালের ১৭ বছর বয়সী ছেলে জশুয়া পাসকুয়াল লাক্সামানা-কে পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। জশুয়া পেশায় ছিলেন অনলাইন গেমার। ঘটনার সময় তিনি একটি টুর্নামেন্ট থেকে ফিরছিলেন। পুলিশের দাবি, জশুয়া নাকি তাদের দিকে গুলি ছুড়েছিল এবং মোটরসাইকেলে পালানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জশুয়া মোটরসাইকেল চালাতেই পারতেন না। তাঁর পরিবার সবসময় বলে এসেছে, জশুয়া মাদক ব্যবহার করতেন না এবং কোনো অস্ত্রও রাখতেন না।
লুজভিমিন্দা সিয়াপো নামের আরেক নারীর ছেলে রায়মার্ট সিয়াপো-কে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। রায়মার্টের পায়ে সমস্যা ছিল। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে কয়েকজন লোক তাঁকে ধরে নিয়ে যায় এবং মাথায় গুলি করে হত্যা করে।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানিয়েছে, তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সকলের বিচার চান। তাঁদের অভিযোগ, দুতার্তের মাদকবিরোধী অভিযান ছিল মূলত গরিব মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খান দুতার্তের গ্রেপ্তারকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা ভুক্তভোগীদের জন্য অনেক বড় একটা বিষয়। এটি প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক আইন দুর্বল নয়।” তিনি আরও জানান, তাঁর কার্যালয় ফিলিপাইনের পরিস্থিতি নিয়ে কয়েক বছর ধরে তদন্ত করছে এবং দুতার্তের ক্ষমতা গ্রহণের আগের ঘটনাগুলোও এর অন্তর্ভুক্ত।
তবে দুতার্তকে এখনো নির্দোষ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা