প্রাক্তন ব্যাংক কর্মকর্তা জেস স্ট্যালি, যিনি একসময় বার্কলেজের প্রধান ছিলেন, কুখ্যাত অর্থ পাচারকারী জেফরি এপস্টাইনের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন কিনা, সেই সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
এই মামলার শুনানিতে স্ট্যালি স্বীকার করেছেন যে তিনি এপস্টাইনের এক কর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন।
যুক্তরাজ্যের আর্থিক পরিচালনা কর্তৃপক্ষ (Financial Conduct Authority – FCA) ২০২৩ সালে স্ট্যালিকে ১.৮ মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানা এবং তার উপর আর্থিক পরিষেবা প্রদানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করে।
কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ছিল, এপস্টাইনের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে তারা স্ট্যালির কাছ থেকে ভুল তথ্য পেয়েছিল।
বর্তমানে লন্ডনের একটি আদালতে এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করছেন ৬৮ বছর বয়সী স্ট্যালি।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে স্ট্যালি বলেছেন, প্রয়াত ফাইনান্সার এপস্টাইনের ‘জঘন্য কার্যকলাপ’ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না।
এফসিএ-এর আইনজীবী তাকে জেস স্ট্যালির আগের কর্মস্থল জেপি মরগানের (JPMorgan) বিরুদ্ধে করা একটি মামলার বিষয়ে প্রশ্ন করেন।
জেপি মরগানে স্ট্যালি প্রাইভেট ব্যাংকের প্রধান ছিলেন এবং এপস্টাইন ছিলেন তাদের একজন ক্লায়েন্ট।
যৌন পাচারের অভিযোগ উপেক্ষা করার দায়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন আইল্যান্ডস জেপি মরগানের বিরুদ্ধে মামলা করে।
পরে জেপি মরগানও স্ট্যালির বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করে, যদিও সেটি পরে নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে হওয়া ওই মামলার শুনানিতে স্ট্যালিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, তিনি নিউ ইয়র্কে ‘এপস্টাইনের ভাইয়ের অ্যাপার্টমেন্টে এক নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন’।
এফসিএ-এর আইনজীবী লি-অ্যানা মুলকাহি এই তথ্য জানান।
স্ট্যালি স্বীকার করেন যে, জেফরি এপস্টাইন ওই নারীর সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে সম্মতির ভিত্তিতে সম্পর্ক হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, ওই নারী ‘আমার মনে হয় তার (এপস্টাইনের) স্টাফের একজন ছিলেন’।
এফসিএ আরও উল্লেখ করেছে যে, এপস্টাইন স্ট্যালিকে তার সম্পত্তির ট্রাস্টি হতে বলেছিলেন, যা তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ।
জবাবে স্ট্যালি জানান, ‘আমি তাকে না করে দিয়েছিলাম’।
বার্কলেজের তৎকালীন চেয়ারম্যান নাইজেল হিগিন্স ২০১৯ সালে এফসিএকে একটি চিঠি লিখেছিলেন।
এপস্টাইনের গ্রেপ্তারের পর তার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ওপর যখন নজরদারি শুরু হয়, ঠিক তখনই এই চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল।
এফসিএ বলছে, ওই চিঠিতে দুটি ভুল তথ্য ছিল।
প্রথমত, স্ট্যালির সঙ্গে এপস্টাইনের ‘ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল না’।
দ্বিতীয়ত, তাদের মধ্যে সবশেষ যোগাযোগ হয়েছিল ‘২০১৫ সালে বার্কলেজে যোগদানের অনেক আগে’।
স্ট্যালি অবশ্য বলেছেন, উভয় বক্তব্যই সঠিক ছিল।
এফসিএ স্ট্যালি এবং এপস্টাইনের মধ্যে হওয়া ১০০০টির বেশি ইমেইলের একটি সংগ্রহ পেশ করেছে।
যেখানে স্ট্যালি তার বন্ধুত্বের গভীরতা বর্ণনা করেছেন এবং এপস্টাইনকে ‘পরিবার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
২০১০ সালের একটি ইমেইল চেইনে স্ট্যালি এপস্টাইনকে লিখেছিলেন, ‘খুব ভালো লেগেছে। স্নো হোয়াইটকে হাই বলো’।
এর জবাবে এপস্টাইন জানতে চান, ‘পরের কোন চরিত্রটি চান?’
স্ট্যালি উত্তর দেন, ‘বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট’।
স্ট্যালি বলেছেন, তার এই ইমেইলগুলোর কথা মনে নেই।
তথ্য সূত্র: সিএনএন