ডিজিটাল দুনিয়ায় শিশুদের নিরাপত্তা: আমেরিকার পথে হাঁটছে কি বাংলাদেশ?
বর্তমান ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে, বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে। অনলাইনে তাদের সুরক্ষা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ রাজ্যে একটি নতুন আইন পাস হয়েছে, যা অ্যাপ স্টোরগুলোতে ব্যবহারকারীর বয়স যাচাই এবং নাবালকদের জন্য বাবা-মায়ের অনুমতি বাধ্যতামূলক করেছে। এই আইনটি কি বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে?
ইউটার এই নতুন আইনের মূল উদ্দেশ্য হলো, শিশুদের অনলাইনে ক্ষতিকর বিষয়বস্তু থেকে দূরে রাখা। আইন অনুযায়ী, অ্যাপ স্টোরগুলোকে ব্যবহারকারীর বয়স যাচাই করতে হবে এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের অ্যাপ ডাউনলোড বা ইন-অ্যাপ কেনাকাটার জন্য বাবা-মায়ের সম্মতি নিতে হবে। মেটা’র প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গসহ অনেকে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, অ্যাপ স্টোরগুলোই এই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের উপযুক্ত স্থান।
তবে, এই আইনের বিরোধিতা করছে অ্যাপল ও গুগল-এর মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের প্রধান উদ্বেগ হলো ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা। তাদের মতে, বয়স যাচাইয়ের জন্য সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করতে হতে পারে, যা সবার জন্য নিরাপদ নাও হতে পারে। এছাড়া, এই ধরনের ব্যবস্থা সবার জন্য প্রযোজ্য করা হলে তা অনেক ব্যবহারকারীর জন্য অসুবিধাজনক হবে।
ইউটার এই আইনের ফলে, এখন অ্যাপ স্টোরগুলোকে ব্যবহারকারীদের বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করতে হবে। যেমন: ১৩ বছরের কম বয়সী শিশু, ১৩-১৬ বছর বয়সী কিশোর, ১৬-১৮ বছর বয়সী তরুণ এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক। এই তথ্য অ্যাপ নির্মাতাদের সঙ্গে শেয়ার করা হবে, যা তাদের জন্য উপযুক্ত কন্টেন্ট তৈরি করতে সহায়ক হবে।
তবে, এই আইনের কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন, পরিবারের সবাই যদি একই ডিভাইস ব্যবহার করে, তাহলে বয়স যাচাইয়ের বিষয়টি কিভাবে করা হবে? অথবা, যাদের পারিবারিক জটিলতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের অনুমতি নেওয়া সবসময় সহজ নাও হতে পারে। এছাড়াও, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতার কারণে বয়স যাচাইয়ের পদ্ধতি সবসময় নির্ভুল নাও হতে পারে।
বর্তমানে, বাংলাদেশেও শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানেও স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে, কিন্তু সে অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুরা অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি, বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য এবং ভুল তথ্যের শিকার হচ্ছে।
ইউটার এই আইন থেকে বাংলাদেশ কিছু ধারণা নিতে পারে। যেমন, সরকার ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে কাজ করে শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে, অ্যাপ স্টোরগুলোতে বয়স যাচাই এবং প্যারেন্টাল কন্ট্রোল-এর মতো ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। তবে, ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা এবং ডিজিটাল বিভাজন (digital divide) এর বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা অনলাইন শিক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়।
সবশেষে, ডিজিটাল যুগে শিশুদের সুরক্ষায় একটি সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। সরকার, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, অভিভাবক এবং শিক্ষক-সবারই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ অনলাইন জগৎ নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন