যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন সিনেট নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্রেটদের জন্য বেশ কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ডেমোক্রেট সিনেটরের আসন্ন অবসর গ্রহণ তাদের জন্য নতুন সংকট ডেকে এনেছে। এর ফলে, রিপাবলিকানদের কাছ থেকে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইতিমধ্যে, মিশিগান, মিনেসোটা এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারের তিনজন প্রভাবশালী সিনেটর তাদের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তগুলো ডেমোক্রেটদের জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, এই রাজ্যগুলোতে রিপাবলিকানদের প্রভাব বাড়ছে এবং তাদের জয়লাভের সম্ভাবনাও বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ডেমোক্রেটদের জন্য আসন ধরে রাখা এবং নতুন করে জেতা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যবর্তী নির্বাচনগুলোতে সাধারণত ক্ষমতাসীন দলের খারাপ ফল করার একটা প্রবণতা দেখা যায়। ভোটাররা প্রেসিডেন্টের কাজের মূল্যায়ন করে এবং এর ভিত্তিতে তাদের রায় দেন। সেই হিসেবে, ২০২৬ সালের নির্বাচন ডেমোক্রেটদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আগামী নির্বাচনে ভালো ফল করতে না পারলে, ভবিষ্যতে সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
ডেমোক্রেটিক সিনেটরিয়াল ক্যাম্পেইন কমিটির (DSCC) মুখপাত্র ডেভিড বার্গস্টেইন জানিয়েছেন, তারা এই নির্বাচনের সুযোগ কাজে লাগাতে চান। তিনি বলেন, “রিপাবলিকানদের অনেকগুলো আসন রক্ষা করতে হবে, যা তাদের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে।”
অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা মনে করছেন, ডেমোক্রেটদের এই সরে দাঁড়ানো তাদের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। রিপাবলিকান কৌশলবিদ করি ব্লিস বলেছেন, “যখন কোনো সিনেটর বুঝতে পারেন যে নির্বাচনে জেতা কঠিন, তখনই তারা পদত্যাগ করেন।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রিপাবলিকানদের দুর্বল প্রার্থী বাছাইয়ের কারণেও ডেমোক্রেটদের সুবিধা হতে পারে। অতীতে দেখা গেছে, রিপাবলিকান পার্টি বিতর্কিত এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনপুষ্ট কিছু প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে, যার ফলস্বরূপ তারা নির্বাচনে হেরেছে।
অন্যদিকে, ডেমোক্রেটদের দলত্যাগীরা বলছেন, এই মুহূর্তে সরে দাঁড়ানো তাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। তারা মনে করেন, তাদের রাজ্যের জন্য শক্তিশালী ডেমোক্রেট প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবে।
এই পরিস্থিতিতে, নিউ হ্যাম্পশায়ারের সিনেটর জেন শাহীন এর পদত্যাগ ডেমোক্রেটদের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কারণ, তিনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং তার জনপ্রিয়তাও রয়েছে। নিউ হ্যাম্পশায়ারে রিপাবলিকানরা ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে, যা ডেমোক্রেটদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
রিপাবলিকান কৌশলবিদ জিম মেরিল বলেছেন, “এটা একটা ভূমিকম্পের মতো ঘটনা। এই আসনে এখন হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।” নিউ হ্যাম্পশায়ারের প্রাক্তন রিপাবলিকান গভর্নর ক্রিস সুনুনু এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে জানা গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেমোক্রেটদের জন্য তাদের দল থেকে ভালো প্রার্থী বাছাই করাটা এখন জরুরি। কারণ, শক্তিশালী প্রার্থী না থাকলে রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে জেতা কঠিন হবে।
সিনেট থেকে কয়েকজন প্রভাবশালী সদস্যের অবসরের ঘোষণার ফলে ডেমোক্রেটদের মধ্যে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দিতে পারে। এতে দলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে পারে এবং নির্বাচনের ফলও প্রভাবিত হতে পারে।
ইতিমধ্যে, মিশিগানে সিনেটর গ্যারি পিটার্সের পদত্যাগের পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মিনেসোটায়ও একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখানেও বিভিন্ন দলের নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেমোক্রেটদের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচনে জেতার জন্য কৌশল তৈরি করা এবং দলের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখা।
তথ্য সূত্র: সিএনএন