যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রীর ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্টতা: উদ্বেগে বিশেষজ্ঞ মহল
গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক শীর্ষ সম্মেলনে, বাণিজ্য মন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা সম্পর্কে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি তুলে ধরেন। মূলত নিয়ন্ত্রণহীন এই বাজারের প্রতি প্রশাসনের আগ্রহের কথা জানান তিনি। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা।
লুটনিক বলেন, “প্রযুক্তি ট্রাম্প প্রশাসনের ভিত্তি। আমরা ব্লকচেইন ব্যবহার করছি, বিটকয়েন ব্যবহার করছি। আমরা ডিজিটাল সম্পদ ব্যবহার করে এগিয়ে যাব, এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প এই পথে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।”
আগের প্রশাসনগুলোর তুলনায় ট্রাম্প প্রশাসনের এই পরিবর্তন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অতীতে, এমনকি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদেও, সরকার ক্রিপ্টো কোম্পানিগুলোকে এড়িয়ে চলত। কিন্তু এবার দৃশ্যপট ভিন্ন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়ার পর, সরকার শুধু এই শিল্পের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে না, বরং একে উৎসাহিত করছে।
তবে, লুটনিকের দীর্ঘদিনের শিল্প সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে তিনি যখন ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রিপ্টো-বান্ধব নীতিগুলো এগিয়ে নিচ্ছেন, যার সুবিধা সম্ভবত ক্রিপ্টোকারেন্সি ধারণকারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
এই ধারণকারীদের মধ্যে রয়েছে ওয়াল স্ট্রিটের প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান কেন্টর ফিটজেরাল্ড। লুটনিক দীর্ঘদিন এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন, সম্প্রতি দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন তার ছেলে ব্র্যান্ডন লুটনিকের হাতে। কেন্টর ফিটজেরাল্ড হলো বিতর্কিত স্টেবলকয়েন ইস্যুকারী টেথারের প্রধান ব্যাংকিং অংশীদার। টেথারের নিজস্ব ডিজিটাল মুদ্রা বা কয়েনটির (token) ব্যাপক লেনদেন হয়।
এছাড়াও, কেন্টর ফিটজেরাল্ড তাদের ক্রিপ্টো হোল্ডিং প্রসারিত করছে। সম্প্রতি, তারা বিটকয়েন ফাইন্যান্সিং ব্যবসা শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে, যা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়ক হবে। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি মাইক্রোস্ট্র্যাটেজিতেও একটি অংশীদারিত্ব কিনেছে, যা বর্তমানে ১.৫৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের। মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি হলো বিটকয়েনের সবচেয়ে বড় কর্পোরেট হোল্ডার। এছাড়াও কেন্টরের ক্রিপ্টো হোল্ডিংয়ে রয়েছে ৮৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের আইশেয়ার্স বিটকয়েন ট্রাস্ট ইটিএফ।
তবে, লুটনিক ব্যক্তিগতভাবে ক্রিপ্টো সম্পদ ধারণ করেন কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তিনি তার আর্থিক বিবরণীতে ৮০০টির বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের কথা উল্লেখ করেছেন, এবং নিশ্চিত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে সেগুলো বিক্রি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচকরা বলছেন, লুটনিকের এই পদক্ষেপ স্বার্থের সংঘাত তৈরি করতে পারে।
কেন্টর ফিটজেরাল্ডের সঙ্গে জড়িত কোনো বিষয়ে তার (লুটনিক) হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।”
আইন কেবল সম্পদ প্রকাশ এবং বিক্রি করার কথা বলে, তবে এর মাধ্যমে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা যেতে পারে, যা ভবিষ্যতে সুবিধা বয়ে আনবে।”
ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তার ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগের বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অন্তত চারজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার ক্রিপ্টো হোল্ডিংয়ে প্রায় ৭৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে।
অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্পও সম্প্রতি ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তার পরিবারের সদস্যরা ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইনান্সিয়াল এবং কিছু মেমকয়েন থেকে সরাসরি সুবিধা পাচ্ছেন, যা দুর্নীতির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) সম্প্রতি ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসায়ী জাস্টিন সান-এর বিরুদ্ধে একটি মামলা স্থগিত করেছে। সান-এর ট্রাম্প পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এসব পদক্ষেপকে উদ্বেগের সঙ্গে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন একটি ‘বিটকয়েন রিজার্ভ’ তৈরি করতে চাইছে, যেখানে তারা অপরাধমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে জব্দ করা বিটকয়েন জমা করবে। এটিকে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক অস্থিরতা থেকে বাঁচতে একটি কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা এই পদক্ষেপের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা মনে করেন, এটি সাধারণ মানুষের পরিবর্তে ক্রিপ্টোকারেন্সির পুরনো বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দেবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সির এই উত্থান বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একদিকে যেমন নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে, তেমনি এর সঙ্গে জড়িত ঝুঁকিগুলোও বিবেচনা করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন