যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিভাগ কর্তৃক আটক হওয়া একজন ফিলিস্তিনি-সিরীয় নাগরিক মাহমুদ খলিলের ঘটনা এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করা মাহমুদ এক সময় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরে কাজ করতেন। তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন, যদিও তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অপরাধের অভিযোগ আনা হয়নি। বরং, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির জন্য তিনি ঝুঁকি স্বরূপ, এমনটা উল্লেখ করা হয়েছে।
মাহমুদ খলিল, যিনি সিরিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন এবং ফিলিস্তিনি নাগরিক, গত বছর কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিন বিষয়ক প্রতিবাদে সক্রিয় ছিলেন। তার আটকের পর যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (DHS) জানায়, মাহমুদ হামাসের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কাজ করতেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই মূলত তাকে আটকের পর দেশ থেকে বিতাড়িত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
মাহমুদের স্ত্রী, নূর আবদাল্লাহ, যিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তার স্বামীর মুক্তির জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার স্বামীকে আমাদের বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এটা খুবই লজ্জাজনক যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখনো তাকে আটকে রেখেছে, কারণ তিনি তার জনগণের অধিকারের জন্য কথা বলেছেন।”
মাহমুদের আইনজীবী জানিয়েছেন, ব্রিটিশ সরকারের হয়ে কাজ করার সময় মাহমুদকে বিস্তারিতভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছিল। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রেও তার সব তথ্য খতিয়ে দেখা হয়েছে। এরপরও পররাষ্ট্র নীতির কারণ দেখিয়ে তাকে বিতাড়িত করার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা অ্যান্ড্রু ওয়ালেস জানান, মাহমুদ খলিল ছিলেন একজন অত্যন্ত মেধাবী ও নির্ভরযোগ্য সহকর্মী। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র সরকার রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে একজন মানুষকে গ্রেপ্তার করছে, যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। ব্রিটিশ সরকারেরও বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত।” ওয়ালেস আরও যোগ করেন, দূতাবাসগুলোতে স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির জ্ঞানসম্পন্ন কর্মীদের ওপর ব্রিটিশ সরকার নির্ভরশীল। মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটিশ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেখানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার জন্য বৃত্তি দেওয়া হতো। সিরিয়া বিষয়ক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রনীতি তৈরিতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
মাহমুদের ঘটনা মানবাধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর একটি গুরুতর আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, তাকে আটকের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়নি। শুধু পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা অনেকের কাছেই অগ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও মাহমুদকে সমর্থন জানিয়ে তার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian