আর্জেন্টিনায় পেনশন সংস্কারের প্রতিবাদে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে আহত অনেকে, মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে পেনশন বৃদ্ধি এবং বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহ পুনরায় চালুর দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন কয়েক হাজার অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক। প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মেইলেইয়ের কঠোর অর্থনৈতিক নীতির প্রতিবাদে আয়োজিত এই বিক্ষোভে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন ফটো সাংবাদিক কোমায় রয়েছেন। খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে।
বুধবারের এই বিক্ষোভে বয়স্ক মানুষেরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও জলকামান ব্যবহার করে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং পুলিশের একটি ভ্যান ও কিছু আবর্জনাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক ডজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে।
আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী ফ্রিল্যান্স ফটো সাংবাদিক পাবলো গ্রিলো। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের ছোড়া টিয়ার গ্যাসের শেল তার মাথায় লাগে। এতে তার খুলিতে ফাটল ধরে এবং মস্তিষ্কের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে তিনি গভীর কোমায় আছেন।
বিক্ষোভের পর আর্জেন্টিনার নিরাপত্তা মন্ত্রী প্যাট্রিসিয়া বুলরিচের পদত্যাগ দাবি করেছেন অনেকে। আর্জেন্টিনার গ্রাফিক রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (aRGra) এক বিবৃতিতে অবিলম্বে তাকে অপসারণের দাবি জানায়। তারা বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের সাবেক এক ছাত্রকে নির্মমভাবে আহত করেছে। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে তার ও তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের অপসারণ এবং বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”
আর্জেন্টিনার বিরোধী দলীয় নেতারাও পুলিশের এই কঠোর ভূমিকার নিন্দা করেছেন। বুয়েনস আইরেস প্রদেশের গভর্নর অ্যাক্সেল কিসিলফ এই ঘটনাকে “বর্বর, বেআইনি ও পূর্বপরিকল্পিত” আখ্যা দিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট মেইলেইয়ের অর্থনৈতিক সংস্কারের কারণে দেশটির বয়স্ক নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় পেনশন বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে এবং বিনামূল্যে ঔষধ পাওয়ার তালিকাও সংকুচিত করা হয়েছে। বর্তমানে, দেশটির প্রায় ৬০ শতাংশ অবসরপ্রাপ্ত মানুষ সর্বনিম্ন পেনশন পান, যা মাসে প্রায় ৩৪০ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪০ হাজার টাকার সমান)।
এই বিক্ষোভের ঘটনায় আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের মুখপাত্র ম্যানুয়েল অ্যাডোর্নি এই বিক্ষোভকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছেন। নিরাপত্তা মন্ত্রী বুলরিচ বলেছেন, “আর্জেন্টিনায় আইনের শাসনই চলবে, উচ্ছৃঙ্খল অথবা বামপন্থীদের কোনো স্থান নেই।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান