যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা ডলার জেনারেল সতর্ক করেছে যে দেশটির স্বল্প আয়ের মানুষের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটার ক্ষেত্রেও কাটছাঁট করতে বাধ্য করছে। এই পরিস্থিতিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ক্রেতারাও এখন সস্তায় জিনিস কেনার জন্য ডলার জেনারেলের মতো দোকানে ভিড় করছেন।
ডলার জেনারেল সাধারণত কম আয়ের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের প্রধান গ্রাহক, যাদের বার্ষিক আয় ৪০ হাজার ডলারের নিচে, তারা বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। ডলার জেনারেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টড ভাসোস এক বিবৃতিতে জানান, “গত এক বছরে আমাদের গ্রাহকদের আর্থিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। মূল্যস্ফীতির কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “অনেকের কাছে কেবল প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার মতো অর্থ আছে। এমনকি প্রয়োজনীয় জিনিসও অনেকে কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও স্বাস্থ্যখাত এবং অন্যান্য জরুরি জিনিসের দাম এখনো অনেক বেশি। ফলে মানুষের বাজেট আগের মতোই চাপে রয়েছে। ডলার জেনারেল জানিয়েছে, গত প্রান্তিকে তাদের দোকানে আগের বছরের তুলনায় বিক্রি মাত্র ১.২ শতাংশ বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানাচ্ছে, অর্থনৈতিক চাপের কারণে গ্রাহকেরা আগের মতো নিয়মিত কেনাকাটা করতে পারছেন না।
অন্যদিকে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারাও এখন ডলার জেনারেলের মতো কম দামের দোকানে ঝুঁকছেন। যা প্রমাণ করে, বেশি আয়ের মানুষেরাও আর্থিক চাপে রয়েছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদানি শুল্কের কারণেও পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই শুল্ক ভোক্তাদের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ডলার জেনারেল জানিয়েছে, তারা শুল্কের প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে, যেমনটা তারা ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও ছিল। তবে সেই সময় শুল্কের কারণে তারা পণ্যের দাম বাড়িয়েছিল।
বিভিন্ন কোম্পানির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি, শুল্ক এবং শেয়ার বাজারের অস্থিরতার কারণে সব শ্রেণির গ্রাহকদের মধ্যে কেনাকাটার প্রবণতা কমেছে। ডেল্টা এয়ারলাইন্স তাদের মুনাফার পূর্বাভাস কমিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে কর্পোরেট ও গ্রাহক আস্থা কমে যাওয়ায় ভ্রমণের চাহিদাও কমছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মুডি’স অ্যানালিটিক্সের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে উচ্চ আয়ের পরিবারগুলো তাদের খরচ ১২ শতাংশ বাড়িয়েছে। একই সময়ে, মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো তাদের খরচ কমিয়েছে।
কোলের (Kohl’s) নামে আরেকটি খুচরা বিক্রেতা জানিয়েছে, এ বছর তাদের বিক্রি ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। কোলেরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যাশলে বুচানান জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা স্বল্প আয়ের গ্রাহকদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। তিনি আরও জানান, যাদের বার্ষিক আয় ৫০ হাজার ডলারের কম, তাদের অবস্থা খুবই কঠিন এবং যাদের আয় এক লাখ ডলারের নিচে, তাদের জন্যও পরিস্থিতি বেশ চ্যালেঞ্জিং।
তথ্যসূত্র: সিএনএন