গুয়েতেমালার একটি ছোট্ট শহর, লিভিংস্টন, যা তার নিজস্ব সংস্কৃতি আর খাবারের জন্য সারা বিশ্বে পরিচিত।
আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত এই শহরটি যেন দেশটির মূল ভূখন্ড থেকে আলাদা হয়ে আছে।
এখানে যেতে হলে নৌকাই একমাত্র ভরসা।
চারদিকে বৃষ্টিবন, নদী আর লোনা জলের বেড়া দিয়ে ঘেরা এই শহরের মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি আর খাদ্যাভ্যাসও তাই অন্যদের থেকে ভিন্ন।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে খাবারের সংস্কৃতি সবসময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
খাদ্য আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
লিভিংস্টনের মানুষের জীবনেও খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম।
এখানকার স্থানীয় খাবারগুলো তাদের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি।
এখানকার মানুষের প্রধান খাবার হলো “তাপাদো” (Tapado), যা মূলত বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ, নারকেল দুধ, সবজি ও মশলার মিশ্রণে তৈরি একটি সুস্বাদু পদ।
এছাড়াও, কাসাভা রুটি, কলার তালের পিঠা এবং টমেটো-ভিত্তিক “বয়েল-আপ” সস এখানকার জনপ্রিয় খাবারের তালিকায় উল্লেখযোগ্য।
লিভিংস্টনের প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ গারিফুনা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।
তারা মূলত আফ্রিকা থেকে আসা ক্রীতদাস এবং স্থানীয় ক্যারিব আদিবাসীদের বংশধর।
এই গারিফুনা সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি আর রন্ধনশৈলী লিভিংস্টনের খাবারের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
এখানকার খাবার তৈরিতে নারকেল, প্ল্যান্টেইন ও সবুজ কলার ব্যবহার তাদের নিজস্বতা ফুটিয়ে তোলে।
স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি এই খাবারগুলো গারিফুনাদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে।
শহরের “হ্যাপি ফিশ” (Happy Fish) -এর মতো রেস্টুরেন্টগুলোতে পাওয়া যায় ঐতিহ্যবাহী খাবার।
মারিয়া লুইসা কোবোস-এর মতো রাঁধুনিরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই রেসিপিগুলো বাঁচিয়ে রেখেছেন।
তিনি গর্বের সঙ্গে জানান, “তাপাদো” রান্নার আসল রেসিপিটি তাঁর মায়ের কাছ থেকে পাওয়া।
এছাড়াও, লেটি ফুয়েন্তেসের হাতের মোলায়েম কলা রুটি এখানকার অন্যতম আকর্ষণ।
বুগা মামা (Buga Mama) নামের একটি রেস্টুরেন্টেও স্থানীয় খাবার পাওয়া যায়, যেখানে মায়ান সম্প্রদায়ের লোকেরা কাজ করেন।
লিভিংস্টনের সংস্কৃতি শুধু খাবারে সীমাবদ্ধ নয়।
এখানকার সঙ্গীতও তাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ।
“এসিট দে কোকো” (Aceite de Coco) ব্যান্ডের গানগুলো গারিফুনা সম্প্রদায়ের লোককথার প্রতিচ্ছবি।
তাদের নাচের পোশাকেও ফুটে ওঠে স্থানীয় সংস্কৃতি।
পর্যটকদের কাছে লিভিংস্টন যেন এক টুকরো দ্বীপের মতো, যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য আর স্থানীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধন দেখা যায়।
এখানকার খাবার, সঙ্গীত আর মানুষের আন্তরিকতা—সবকিছু মিলেমিশে এই শহরটিকে করেছে অনন্য।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক