ইউরোপের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ: বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য কী প্রভাব?
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর ইউরোপের সামরিক প্রস্তুতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ন্যাটোর (NATO) সামরিক পরিকল্পনাগুলো কতখানি কার্যকর হবে, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে জনবল সংকট এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অগ্রাধিকার পরিবর্তনের ইঙ্গিত। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য সম্ভাব্য প্রভাবগুলো আলোচনা করা জরুরি।
ন্যাটো জোট তাদের পূর্বাঞ্চলে দ্রুত সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করলেও, পর্যাপ্ত জনবল সংগ্রহ করা ইউরোপের দেশগুলোর জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করা হলেও, প্রতিরক্ষা শিল্পে উৎপাদন সেভাবে বাড়ানো যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণের মোকাবিলায় ন্যাটোর প্রয়োজন আরও অনেক বেশি সৈন্যের, যা বর্তমানে তাদের নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যদি তাদের নিরাপত্তা নীতি পরিবর্তন করে, সেক্ষেত্রে ইউরোপকে নিজেদের সুরক্ষার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। এই পরিস্থিতিতে, ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে জনবল ঘাটতি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু দেশের নাগরিকদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, আবার কোনো কোনো দেশে বাধ্যতামূলক সামরিক সেবার ধারণা নিয়ে বিতর্ক চলছে।
সামরিক খাতে জনবল সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, পোল্যান্ড তাদের সেনাবাহিনীর আকার দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে, জার্মানির মতো উন্নত দেশেও সেনাবাহিনীতে লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যাচ্ছে। অনেক তরুণ সামরিক জীবনকে আকর্ষণীয় মনে করে না। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও আধুনিক সরঞ্জামের অভাবও এর কারণ।
ইউরোপের এই সামরিক দুর্বলতা বিশ্ব অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যদি ইউরোপে অস্থিতিশীলতা বাড়ে, তবে বিশ্ব বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর ফলস্বরূপ বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও চাপ সৃষ্টি হতে পারে।
অন্যদিকে, সামরিক খাতে অর্থ বিনিয়োগের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন সহায়তা কমে যেতে পারে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে, বাংলাদেশের আমদানি ব্যয়ও বাড়বে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
তবে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের জন্য কিছু সুযোগও তৈরি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমা দেশগুলো সামরিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি উৎপাদনে আরও বেশি মনোযোগ দিলে, বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার হতে পারে।
সবকিছু বিবেচনা করে, ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দিকে গভীর নজর রাখা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে আরও সক্রিয় করতে হবে, যাতে যেকোনো ধরনের সংকট মোকাবিলা করা যায়।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস