অস্ট্রেলিয়ার একটি বিরল প্রাণী ওয়ামব্যাট (Wombat)। এরা দেখতে অনেকটা ছোট আকারের ভালুকের মতো, তবে এদের থলি আছে, যার কারণে এরা মার্সুপিয়াল শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি, একজন মার্কিন সামাজিক মাধ্যম প্রভাবক (সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার) সাম জোনস-এর একটি কাণ্ড বিশ্বজুড়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
তিনি একটি ওয়ামবাটের বাচ্চাকে (যাকে জোয়ি বলা হয়) তার মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ানো অবস্থায় ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি বাচ্চাটিকে ছেড়ে দেন, কিন্তু ততক্ষণে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
বন্যপ্রাণীর সঙ্গে এমন আচরণ করা উচিত নয়, এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জুওলজি জাদুঘরের সহকারী পরিচালক এবং অস্ট্রেলিয়ার স্তন্যপায়ী প্রাণী বিষয়ক লেখক জ্যাক অ্যাশবি বলেন, “অস্ট্রেলিয়ার বন্যজীবন সত্যিই অসাধারণ, আমার মতে বিশ্বের সেরা। আর মানুষ সেখানে যায় এটি দেখতে। কিন্তু বন্যপ্রাণীর সঙ্গে এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
ওয়ামব্যাট দেখতে নিরীহ হলেও এরা কিন্তু বেশ শক্তিশালী প্রাণী। এদের আত্মরক্ষার নিজস্ব কৌশল রয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আচরণ বিষয়ক বাস্তুবিজ্ঞানী জোয়ানা বাগনিয়েভস্কা বলেন, “একটি পূর্ণবয়স্ক ওয়ামবাটের ওজন প্রায় ৩৫ কেজির মতো হতে পারে, যা একটি বক্সার কুকুরের সমান। কেউ যদি ধাক্কা মারে, তবে আপনি টাল সামলাতে পারবেন না।”
ওয়ামবাটের ধারালো দাঁত ও লম্বা নখ রয়েছে, যা তাদের শিকারী এবং অন্যান্য বিপদ থেকে রক্ষা করে।
আশঙ্কা করা হয়, ওয়ামবাটদের মধ্যে সারকপটিক ম্যাঞ্জ (Sarcoptic mange) নামক এক প্রকার চর্মরোগ ব্যাপক হারে দেখা যায়। এটি একটি মারাত্মক রোগ, যা মানুষের জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে।
যদিও ওয়ামব্যাট বিলুপ্তপ্রায় নয়, তবে অস্ট্রেলিয়ান আইন এদের সুরক্ষা দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের সামান্যতম হস্তক্ষেপও প্রাণীদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। জোনস-এর মতো ওয়ামবাটের বাচ্চাকে শূন্যে ঝুলিয়ে রাখলে তার মেরুদণ্ডের ক্ষতি হতে পারে।
বাগনিয়েভস্কা বলেন, “ওয়ামব্যাট মূলত ভূমিবাসী প্রাণী, তাই কয়েক ফুট ওপরে ঝুলানো তাদের জন্য স্বাভাবিক নয়।”
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মায়ের কাছ থেকে বাচ্চাকে আলাদা করা বাচ্চার জন্য মানসিক আঘাতের কারণ হতে পারে।
জ্যাক অ্যাশবি বলেন, “বাচ্চাটিকে ধরে নিয়ে দৌড় দিলে মা ও বাচ্চার মধ্যে চরম ভয়ের সৃষ্টি হয়, যা ভিডিওটিতে স্পষ্ট দেখা গেছে। যাদের বাড়িতে কুকুর বা বিড়াল আছে, তারা জানেন যে বুদ্ধিমান স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলো কোনো আঘাত পেলে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক কষ্টে ভোগে।”
বন্যপ্রাণী ভালোবাসার মানুষদের প্রতি বাগনিয়েভস্কার পরামর্শ, “বাচ্চা ওয়ামবাট দেখলে আনন্দ লাগা স্বাভাবিক, তবে তাদের বিরক্ত না করে বরং নিরাপদ দূরত্ব থেকে তাদের সৌন্দর্য উপভোগ করা উচিত।”
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক