স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক: নতুন গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
“আপনি যা খান, তাই আপনি”- এই কথাটি হয়তো বহুবার শুনেছেন। শরীরের মতো মনের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও খাবারের ভূমিকা অনেক। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো বলছে, সঠিক খাবার নির্বাচন করলে এবং ভুল খাবার ত্যাগ করলে ধীরে ধীরে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো যেতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন ইউনিভার্সিটির ফুড অ্যান্ড মুড সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর এবং ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর নিউট্রিশনাল সাইকিয়াট্রি রিসার্চের সভাপতি অধ্যাপক উলফগ্যাং মার্ক্স বলেন, “হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসের মতো শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে যেমন খাদ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তেমনই খাবার মানসিক স্বাস্থ্য, মেজাজ এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকেও প্রভাবিত করে।”
গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ করলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। অধ্যাপক মার্ক্সের মতে, “যেসব খাবারে পুষ্টিগুণ কম থাকে এবং যা অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত করা হয়, সেগুলোর সঙ্গে বিষণ্ণতা (ডিপ্রেশন) ও উদ্বেগের (অ্যাংজাইটি) ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।” তাঁর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাবার খান, তাঁদের মধ্যে উদ্বেগের ঝুঁকি প্রায় ৪৮ শতাংশ এবং বিষণ্ণতার ঝুঁকি ২২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়।
অন্যদিকে, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে গুরুতর মানসিক অবসাদ (মেজর ডিপ্রেশন) কমানো সম্ভব। ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিটারিয়ান ডায়েট অনুসরণ করলে শিশুদের এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং মনোযোগের অভাবজনিত অতি সক্রিয়তা ব্যাধি (এডিএইচডি) -এর ঝুঁকি কমাতে পারে।
এছাড়াও, ৭,৪৩৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি পরিমাণে শস্য, সবজি, ফল, দই, মাছ ও সি-ফুড, দুধ এবং ফলের রস খান, তাঁদের মধ্যে মানসিক চাপ তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
আসলে, খাবারের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসার সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন যোগ করা গেলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ‘হিলিং দ্য মডার্ন ব্রেইন’ ও ‘ইট টু বিট ডিপ্রেশন’ বইয়ের লেখক ড. ড্রু রামসে মনে করেন, মানুষজন হয়তো এখনো খাদ্য নির্বাচনের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার যোগসূত্রটি ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারেন না।
খাবার কীভাবে মন ভালো করতে পারে?
খাবার কীভাবে আমাদের মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলে, আসুন সেই বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক:
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কী খাবেন?
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা যেতে পারে। নিচে কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:
এসব খাবার নিয়মিত গ্রহণ করা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার ত্যাগ করার মাধ্যমে ধীরে ধীরে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো সম্ভব।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক