আমাদের খাদ্য তালিকায় শর্করা জাতীয় খাবারের গুরুত্ব অনেক। ভাত, রুটি, আলু—এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই খাবারগুলো প্রস্তুত ও সংরক্ষণের পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন এনে এর পুষ্টিগুণ বাড়ানো সম্ভব? বিশেষ করে, শর্করা জাতীয় খাবার রান্নার পর ঠান্ডা করে, আবার গরম করে খেলে তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে।
আসলে, শর্করা জাতীয় খাবার, যেমন—ভাত, আলু, পাউরুটি, ইত্যাদি—রান্নার পর ঠান্ডা করলে তাদের মধ্যে “রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ” নামক এক ধরনের উপাদান তৈরি হয়। এই স্টার্চ সহজে হজম হয় না, অনেকটা আঁশের মতো কাজ করে। ফলে এটি আমাদের শরীরের জন্য নানাভাবে উপকারী। রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ আমাদের হজমক্ষমতাকে উন্নত করে, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরপুর রাখতে সহায়তা করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এই পদ্ধতি বিশেষভাবে উপকারী। কারণ, এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া, ওজন কমাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্যও এটি একটি কার্যকর উপায় হতে পারে, যেহেতু রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
তাহলে, কীভাবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করবেন? রান্নার পর খাবার ঠান্ডা করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রান্নার দুই ঘণ্টার মধ্যে খাবার ঘরের তাপমাত্রায় রাখা উচিত নয়। গরম খাবার সরাসরি ফ্রিজে না রেখে, আগে ঠান্ডা করে নিতে হবে। গরম খাবার ফ্রিজে রাখলে ফ্রিজের ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা অন্যান্য খাবারকে আংশিকভাবে গলিয়ে দিতে পারে। এছাড়াও, খাবার ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ঠান্ডা করলে তা দ্রুত এবং সমানভাবে ঠান্ডা হয়।
ভাত, রুটি, ইত্যাদি—যে কোনো শস্য জাতীয় খাবারই এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। তবে কিছু খাবারের ক্ষেত্রে ফল ভালো পাওয়া যায়। যেমন—আটা দিয়ে তৈরি রুটি, রান্না করা ভাত, ইত্যাদি। অন্যদিকে, তাজা পাস্তার মতো বেশি আর্দ্রতাযুক্ত খাবার সংরক্ষণ করলে নরম হয়ে যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়ার জন্য খাবার বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করুন এবং গরম করার সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শস্য জাতীয় খাবার ঠান্ডা করার পরিবর্তে ফ্রিজে রাখলেও একই ধরনের উপকার পাওয়া যায়। তবে, ঠান্ডার তুলনায় ফ্রিজে রাখলে রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চের পরিমাণ কিছুটা কম থাকে। এছাড়াও, খাবার গরম করার সময় ভাপানো বা সেদ্ধ করার চেয়ে মাইক্রোওয়েভে গরম করলে রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চের পরিমাণ বাড়ে।
তবে, কোনো নতুন খাদ্য অভ্যাস শুরু করার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ সকলের হজম ক্ষমতার সঙ্গে নাও মানানসই হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে পেট ফাঁপা বা অস্বস্তি হতে পারে। তাই অল্প পরিমাণে শুরু করে ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ানো ভালো। এছাড়া, রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চযুক্ত খাবারের সঙ্গে প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট গ্রহণ করলে হজম প্রক্রিয়া সহজ হয়।
সুতরাং, আপনার খাদ্য তালিকায় সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করা সম্ভব। রান্নার পর শস্য জাতীয় খাবার ঠান্ডা করে, আবার গরম করে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। এটি একদিকে যেমন খাবারের অপচয় কমায়, তেমনি আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক