সান্তা ক্লারা, ক্যালিফোর্নিয়া – আমেরিকার সান দিয়েগো শহরে ভয়াবহ এক ঘটনার শিকার হয়েছেন ৬৫ বছর বয়সী মনিকা ক্যামেরোনি ডি অ্যাডামস।
গত নভেম্বরে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তার গাড়ির ক্ষতি হয়, এবং এরপর কর্তৃপক্ষ তার গাড়িটি উদ্ধার করে।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে, গাড়ির ভেতরেই তিনি আটকা পড়ে ছিলেন, যা কর্তৃপক্ষের নজরে আসেনি।
এক মাস পর গাড়ির ভেতরে পচন ধরা গন্ধ পাওয়ার পর তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
**দুর্ঘটনার সূত্রপাত ও মর্মান্তিক পরিণতি**
২০২৩ সালের ৫ই নভেম্বর, দিনটা ছিলো সম্ভবত অন্য দিনের মতোই।
মনিকা তার হোন্ডা মিনিভ্যানে ঘুমিয়ে ছিলেন।
রাত ১টার দিকে অন্য একটি গাড়ির সঙ্গে তার গাড়ির সংঘর্ষ হয়।
দুর্ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং গাড়ি দুটিকে সরানোর ব্যবস্থা করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার কারণে মনিকার গাড়ির পেছনের দরজা ভেঙে গিয়েছিল এবং জানালাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
পরে পুলিশ একটি বেসরকারি টাও ট্রাক কোম্পানির মাধ্যমে তার গাড়িটি সরিয়ে নেয়।
পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাড়ির মালিককে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
তাই তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে গাড়িটি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে গাড়িতে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি বা ভাঙচুরের শিকার না হয়।
কিন্তু এর এক মাস পর, ৬ই ডিসেম্বর তারিখে, টাও ইয়ার্ডের কর্মীরা গাড়ির ভেতর থেকে পচা গন্ধ পান।
এরপর খবর দেওয়া হলে পুলিশ ও দমকল কর্মীরা এসে গাড়ির ভেতর থেকে মনিকার পচন ধরা মৃতদেহ উদ্ধার করে।
ময়না তদন্তে জানা যায়, তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল।
**আইন লড়াইয়ের প্রস্তুতি**
মনিকার পরিবারের আইনজীবী জন সি কার্পেন্টার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পরেও হয়তো মনিকা বেঁচে ছিলেন।
কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাননি।
আইনজীবী আরও বলেন, “পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরেছেন যে তাদের মা দুর্ঘটনার স্থান থেকে জীবিত অবস্থায় সরিয়ে নেওয়া হলেও, টাও ইয়ার্ডে একা মৃত্যুর শিকার হয়েছেন।
বিষয়টি তাদের জন্য খুবই কষ্টের।”
এই ঘটনার জন্য সান দিয়েগো শহরের বিরুদ্ধে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আইনজীবীর দাবি, কর্তৃপক্ষের অবহেলা, মানসিক কষ্টের সৃষ্টি এবং মানবিক অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে।
**সমাজের চোখে দারিদ্র্যের চিত্র**
এই ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের গৃহহীন মানুষের কঠিন জীবনযাত্রার একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে।
ক্যালিফোর্নিয়ায় বর্তমানে বহু মানুষ ঘরবাড়িহীন অবস্থায় রাস্তায় দিন কাটান।
গত বছর সান দিয়েগো অঞ্চলে প্রায় ৬ হাজারের বেশি মানুষ তাঁবু, গাড়ি এবং অন্যান্য অস্থায়ী কাঠামোতে বসবাস করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
মনিকার মৃত্যুর ঘটনাটি সেখানকার কর্তৃপক্ষের মানবিক দুর্বলতাকেও প্রকাশ করে।
আইনজীবীর মতে, “দুর্ঘটনার পরে গাড়ির ভেতরে কেউ আছে কিনা, তা পরীক্ষা করার সাধারণ মানবিকতাটুকুও দেখানো হয়নি।”
এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই জানা যায়, গত বছর ভ্যালেজো শহরেও একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল।
সেখানে এক পরিচ্ছন্নতা অভিযানের সময় জেমস এডওয়ার্ড ওকলি নামের ৫৮ বছর বয়সী এক গৃহহীন ব্যক্তি নিহত হন।
**বৃদ্ধ ও অসহায় মানুষের দুর্দশা**
ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় বসবাস করা বয়স্ক এবং দুর্বল মানুষেরা স্বাস্থ্য সমস্যা ও সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।
মে মাসে, ৬৮ বছর বয়সী অ্যানেট পার্সহাল নামের এক গৃহহীন নারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এই ঘটনাগুলো আমাদের সমাজের দুর্বল অংশটির প্রতি গভীর মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান