শিরোনাম: ‘গ্রাহক সবসময় সঠিক’ – এই ধারণা থেকে সরে আসছেন যুক্তরাজ্যের রেস্তোরাঁ মালিকরা
অতিথি আপ্যায়নে ‘গ্রাহক সবসময় সঠিক’ – এই বহুল প্রচলিত ধারণা থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছেন যুক্তরাজ্যের রেস্তোরাঁ মালিকরা। সম্প্রতি, অনেক ভোজনরসিক খাবারের মান নিয়ে অযৌক্তিক অভিযোগ করে বিনামূল্যে খাবার অথবা বিশেষ ছাড় আদায়ের চেষ্টা করছেন। এই পরিস্থিতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ওয়েলশ এবং লন্ডনের বেশ কয়েকজন নামকরা শেফ ও রেস্তোরাঁ মালিক।
ওয়েলসের অন্যতম সেরা শেফ হিসেবে পরিচিত অ্যান্ড্রু শেরিডান জানিয়েছেন, গ্রাহকদের এই ধরনের আচরণ এখন তার কাছে খুবই বিরক্তিকর। তিনি জানান, একবার এক নারী রেস্টুরেন্টের একটি স্টিলের স্তম্ভ নিয়ে আপত্তি তোলেন, যা আসলে একটি পুরনো দ্বিতীয় শ্রেণীর (Grade II) একটি স্থাপনার অংশ, যা ভবনটিকে ধরে রাখতে সহায়তা করে। ওই নারীর অভিযোগ ছিল, স্তম্ভটির কারণে তার ভিউতে সমস্যা হয়েছে এবং তিনি বিনামূল্যে খাবার ও ভাউচার দাবি করেন। শেরিডান আরও জানান, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। একবার কিছু গ্রাহক, রেস্টুরেন্টে আসার পথে তাদের বাসের লেনে গাড়ি চালানোর কারণে জরিমানা হওয়ায়, সেই জরিমানা পরিশোধ করতে বলেন।
শুধু তাই নয়, অনেক সময় রেস্তোরাঁর পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন গ্রাহকরা। একবার এক পরিবার রেস্টুরেন্টে আসার রাস্তার খারাপ অবস্থার জন্য বিনামূল্যে খাবার দাবি করে। অথচ রাস্তাটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল স্থানীয় কাউন্সিল। এমনকী, উপহার হিসেবে পাওয়া ভাউচারের পুরো টাকা ফেরত চেয়েছেন এমন উদাহরণও রয়েছে।
তবে, সব অভিযোগকে একই চোখে দেখেন না শেরিডান। তিনি জানান, গঠনমূলক সমালোচনার প্রতি তাদের সবসময় মনোযোগ রয়েছে। কিন্তু, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে সবাই যেন একজন রেস্তোরাঁ সমালোচক হয়ে উঠেছেন। সামান্য ব্যক্তিগত অপছন্দ হলেও, তারা অনলাইনে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। এমনকি, একদল ব্ল্যাকমেইলার তার রেস্টুরেন্টের অনলাইন তালিকায় ভুয়া রিভিউ দিয়ে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে। শেরিডান জানান, শুরুতে তিনি খারাপ রিভিউয়ের ভয়ে থাকতেন, তবে এখন তিনি গ্রাহকদের এমন আচরণে আর বিচলিত হন না।
অন্যদিকে, লন্ডনের একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁর মালিক ক্রিস ডি’সিলভা গ্রাহকদের রেটিং করার একটি পদ্ধতি চালু করেছেন। তিনি গ্রাহকদের ভালো ব্যবহার এবং খারাপ আচরণের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করেন।
মিশেলিন স্টার প্রাপ্ত শেফ বেন মারফি মনে করেন, রেস্তোরাঁ ও গ্রাহকদের মধ্যে ‘আস্থার সম্পর্ক’ ভেঙে গেছে। তার মতে, গ্রাহকরা এখন বিনামূল্যে খাবার পাওয়ার জন্য নানা রকম ফন্দি আঁটে। একবার এক গ্রাহক খাবারের প্লেটে ক্লিং ফিল্ম (clingfilm) লুকিয়ে রেখে বিনামূল্যে খাবার দাবি করেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জানা যায়, তিনি নিজেই ব্যাগ থেকে ক্লিং ফিল্মটি বের করে প্লেটে রেখেছিলেন।
খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক গ্রাহক বিনামূল্যে খাবার পাওয়ার চেষ্টা করেন বলেও জানান মারফি। রেস্তোরাঁ ম্যাগাজিনের সম্পাদক স্টিফান চমকা জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে গ্রাহকদের হাতে এখন বেশি ক্ষমতা এসেছে। তবে, অনেক শেফ এখন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন।
তবে, সব মালিকই একমত নন। লন্ডনের একটি পাবের মালিক ওইসিন রজার্স-এর মতে, গ্রাহকদের সবসময় সম্মান জানানো উচিত। গ্রাহকদের অভিযোগ শোনার মানসিকতা রাখতে হবে।
বাংলাদেশেও বর্তমানে ফুড ডেলিভারি অ্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রেস্তোরাঁ ও খাবারের মান নিয়ে আলোচনা বেশ জনপ্রিয়। অনেক সময় গ্রাহকদের প্রত্যাশা ও অভিযোগের ধরন যুক্তরাজ্যে দেখা যাওয়া ঘটনার মতোই।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান