ডিজনির নতুন ‘স্নো হোয়াইট’ নিয়ে বিতর্ক: রূপকথা নাকি আধুনিকতার মোড়কে নতুন সমস্যা?
ডিজনির তৈরি করা রূপকথার গল্প ‘স্নো হোয়াইট’ এর নতুন সংস্করণ মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে খুব শীঘ্রই। কিন্তু সিনেমাটি মুক্তির আগেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সিনেমার অভিনেত্রী নির্বাচন থেকে শুরু করে গল্পের আধুনিকীকরণের চেষ্টা—সবকিছু নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। প্রশ্ন উঠেছে, ঐতিহ্যবাহী একটি গল্পের আধুনিক রূপ দিতে গিয়ে কি কিছু ভুল হচ্ছে?
ওয়াল্ট ডিজনি স্টুডিও ক্লাসিক সিনেমাগুলোকে নতুন করে তৈরি করার যে ধারাবাহিকতা শুরু করেছে, তারই অংশ হিসেবে নির্মিত হয়েছে ‘স্নো হোয়াইট’। ১৯৩৭ সালে মুক্তি পাওয়া এই অ্যানিমেটেড সিনেমাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। নতুন সংস্করণে স্নো হোয়াইটের চরিত্রে অভিনয় করেছেন কলম্বিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কিন অভিনেত্রী র্যাচেল জেগলার। অন্যদিকে, খল চরিত্র ‘এভিল কুইন’-এর ভূমিকায় দেখা যাবে ইসরায়েলি অভিনেত্রী গ্যাল গ্যাডটকে। তবে, এই সিনেমায় থাকছে না বামন চরিত্রগুলো। আর এটি নিয়েই যত বিতর্ক।
বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র সমালোচক এবং সাধারণ দর্শকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, গল্পের আধুনিকীকরণের নামে ঐতিহ্যকে খাটো করা হচ্ছে। আবার কারো কারো মতে, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গল্পে পরিবর্তন আনাটা জরুরি। বিশেষ করে, বর্তমান যুগে যখন জাতিগত এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের (Diversity) ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, তখন পুরনো একটি গল্পের নতুন উপস্থাপনা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সিনেমায় র্যাচেল জেগলারের স্নো হোয়াইট চরিত্রটি নিয়ে অনেকে আপত্তি তুলেছেন। তাঁদের মতে, শ্বেতাঙ্গ স্নো হোয়াইটের চরিত্রে একজন ল্যাটিন অভিনেত্রীকে নির্বাচন করাটা মূল গল্পের ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এমনকি, অভিনেত্রী গ্যাডটের রাজনৈতিক মন্তব্যও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের বিষয়ে তাঁর দেওয়া একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সিনেমাটি বয়কট করারও ডাক দেওয়া হয়েছে।
আরেকটি বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে বামন চরিত্রগুলো নিয়ে। এই চরিত্রগুলো বাদ দেওয়ায় অনেকে ডিজনির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাঁদের মতে, এটি গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এবং এর মাধ্যমে সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণির মানুষের প্রতি সম্মান জানানো হতো। তবে, ডিজনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা বামন সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এই চরিত্রগুলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে করে তাঁদের সম্পর্কে কোনো ভুল ধারণা তৈরি না হয়।
ডিজনির এই নতুন ‘স্নো হোয়াইট’ মুক্তি পাওয়ার পর গল্পটি দর্শকদের কতটা আকর্ষণ করতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। কারণ, বিতর্ক এবং আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি সিনেমাটি বক্স অফিসে কেমন ব্যবসা করে, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রূপকথার গল্পকে আধুনিক প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করার এই চেষ্টা কতটুকু সফল হবে, তা জানতে দর্শকদের অপেক্ষা করতে হবে সিনেমাটি মুক্তির জন্য।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান