ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মার্কিন বিমান হামলার পর তেহরানের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। একইসঙ্গে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, হুতিদের কার্যকলাপের জন্য ইরানকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী করা হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুতি বিদ্রোহীদের ওপর যে বিমান হামলা চালিয়েছে, তাতে অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। হুতি নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য দিয়েছে। বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাদ প্রদেশের দুটি বাড়িতে আঘাত হানা হলে চার শিশু ও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আল-মাসিরাহ টিভি চ্যানেলে হতাহতদের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধ চলছে। এর প্রতি সংহতি জানিয়ে হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক নৌ-চলাচল এবং ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। গত জানুয়ারিতে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হুতিদের আক্রমণ বন্ধ হয়ে যায়।
তবে, ইসরায়েল গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দিলে তারা পুনরায় হামলা চালানোর হুমকি দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইরান হুতিদের সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
এমনকি, মার্কিন নৌবাহিনী ইরানের তৈরি ক্ষেপণাস্ত্রের অংশ এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র আটক করেছে, যেগুলো হুতিদের কাছে যাচ্ছিল বলে তারা দাবি করেছে। হুতি বিদ্রোহীরা বর্তমানে ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ দেশটির উত্তরাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ডের প্রধান জেনারেল হোসেন সালামি ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে হুতিদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, হুতি বিদ্রোহীদের ‘জাতীয় বা কর্মপরিচালনা নীতি’ নির্ধারণে ইরানের কোনো ভূমিকা নেই।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, ওয়াশিংটন ইরানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে নৌ-চলাচলের ওপর হামলা বন্ধ না করলে তিনি ‘ব্যাপক ধ্বংসাত্মক শক্তি’ ব্যবহার করবেন। হুতি বিদ্রোহীরা গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনের জলসীমায় ইসরায়েলি জাহাজে হামলা চালানোর ঘোষণা দেওয়ার কয়েক দিন পরেই এই বিমান হামলা চালানো হয়।
তবে, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো হামলার খবর পাওয়া যায়নি। গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সময়ে হুতি বিদ্রোহীরা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে একশোর বেশি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে।
তাদের হামলায় দুটি জাহাজ ডুবে গেছে এবং চারজন নাবিকের মৃত্যু হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ব্রিটেনও ইয়েমেনে হুতি নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন স্থানে আঘাত হেনেছে।
তবে, শনিবারের হামলা ছিল শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের একক অভিযান এবং ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে এটিই ছিল প্রথম হামলা। তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস