ব্রিটিশ নাগরিকের জীবন এখন চরম ঝুঁকিতে, তালেবান হেফাজতে গুরুতর অসুস্থ
আফগানিস্তানে তালেবানদের হাতে বন্দী এক বৃদ্ধ ব্রিটিশ নাগরিকের জীবন এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে। জানা গেছে, ৭৯ বছর বয়সী পিটার রেইনল্ডস নামের ওই ব্যক্তি এবং তাঁর ৭৫ বছর বয়সী স্ত্রী বার্বি রেইনল্ডস আফগানিস্তানে একটি প্রশিক্ষণ ব্যবসা পরিচালনা করেন। গত মাসে বামিয়ান প্রদেশে নিজেদের বাড়িতে যাওয়ার সময় তাঁদের আটক করা হয়।
তাঁদের মেয়ে সারা এন্টউইসেল সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাবা-মাকে আলাদা করে একটি উচ্চ-নিরাপত্তা কারাগারে নেওয়ার পর তাঁর বাবার স্বাস্থ্য “উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ” হয়েছে। তিনি আরও জানান, “আমরা জানতে পেরেছি তাঁর বুকে সংক্রমণ হয়েছে, চোখের সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং অপুষ্টির কারণে গুরুতর হজমের সমস্যা হচ্ছে।
সারা এন্টউইসেল আরও বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ করা না হলে তাঁর জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।” হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য তাঁর নিয়মিত ঔষধের প্রয়োজন, কারণ গ্রেপ্তারের আগে তিনি মিনি-স্ট্রোক করেছিলেন। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রেইনল্ডসকে “মারধর ও শিকল পরানো” হয়েছে, যার কারণে তিনি তীব্র যন্ত্রণায় ভুগছেন।
তালেবানদের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে সারা বলেন, “আমরা তালেবান কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি, দয়া করে তাঁদের মুক্তি দিন। তাঁদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হোক, যেখানে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ঔষধ গ্রহণ করতে পারবেন। আমরা বিশ্বাস করি, এটি কেবল একটি আবেদন হিসেবে বিবেচনা না করে, বরং বিশ্বজুড়ে স্মরণীয় এক মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপনের সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত।”
এই দম্পতির ব্যবসা, ‘রিবিল্ড’, গত ১৮ বছর ধরে আফগানিস্তানের স্কুলগুলোতে বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে আসছে। এমনকি ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পরেও তাঁরা কাজ চালিয়ে যান। বার্বি রেইনল্ডস তালেবানদের কাছ থেকে স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথম নারী হিসেবে সম্মাননা লাভ করেছিলেন।
১লা ফেব্রুয়ারি, পিটার ও বার্বির সঙ্গে তাঁদের আমেরিকান-চীনা বন্ধু ফে হলেরও গ্রেপ্তার হন। ফে একটি বিমান ভাড়া করে তাঁদের সঙ্গে যাচ্ছিলেন। এছাড়া, ‘রিবিল্ড’-এর একজন অনুবাদককেও আটক করা হয়।
তাঁদের আটকের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়। সারা এন্টউইসেলের ধারণা, তাঁরা মা ও শিশুদের শিক্ষাদানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেই হয়তো তাঁদের আটক করা হয়েছে। ‘রিবিল্ড’-এর একজন কর্মচারী জানিয়েছেন, তাঁদের জানানো হয়েছিল যে তাঁদের ফ্লাইট “স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বিত ছিল না”। তাঁদের সবাইকে কাবুলে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে বিবিসি-তে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তালেবান কর্মকর্তা আবদুল মতিন কানি বলেন, “আমরা বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করছি এবং মূল্যায়নের পর যত দ্রুত সম্ভব তাঁদের মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করব।” কানি আরও জানান, তিনজন বিদেশি নাগরিকের কাছে আফগান পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে।
জানা গেছে, পিটার ও বার্বি ১৯৭০ সালে কাবুলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ব্রিটিশ সরকারের হস্তক্ষেপ চাননি। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, “আমরা আফগানিস্তানে আটক দুই ব্রিটিশ নাগরিকের পরিবারের পাশে আছি এবং তাঁদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করছি।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান