যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে ডেমোক্রেটিক পার্টির জনপ্রিয়তা এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে, জানিয়েছে সিএনএন-এর জরিপ। জনগণের মধ্যে দলটির প্রতি অসন্তোষ বাড়ছে, যা তাদের ভোট ব্যাংককে দুর্বল করে দিচ্ছে।
সম্প্রতি পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, দলের অনেক সমর্থক মনে করেন তাদের নেতারা রিপাবলিকানদের মোকাবিলায় যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
সিএনএন-এর হয়ে এসএসআরএস (SSRS) এই জরিপটি পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতি আমেরিকানদের মধ্যে অনুকূল মনোভাব ২৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
১৯৯২ সাল থেকে সিএনএন-এর জরিপে এটি সর্বনিম্ন। এর আগে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের সময় এই হার ছিল ৪৯ শতাংশ।
অন্যদিকে, রিপাবলিকান পার্টির প্রতি সমর্থন এখনো কিছুটা বেশি, ৩৬ শতাংশ।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ ডেমোক্রেট ও ডেমোক্রেট সমর্থক মনে করেন, তাদের দলের নেতাদের রিপাবলিকানদের এজেন্ডা রুখতে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। তাদের মতে, রিপাবলিকানদের সঙ্গে সমঝোতা করে কিছু বিষয় আদায় করার চেয়ে প্রতিরোধের দিকে জোর দেওয়া দরকার।
যদিও দলের অনেক নেতাই চান উভয় দলের মধ্যে আলোচনা চলুক এবং কিছু বিষয়ে ঐকমত্য আসুক।
অন্যদিকে, দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজনও স্পষ্ট হয়েছে।
জরিপে অংশ নেওয়া ডেমোক্রেট ও ডেমোক্রেট সমর্থক ৫২ শতাংশ মনে করেন, দলের বর্তমান নেতৃত্ব সঠিক পথে নেই।
আট বছর আগেও এই বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখা যেত। দলের এই দুর্বলতার কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
জরিপে আরও দেখা গেছে, ডেমোক্রেটিক পার্টির নীতির প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে চরমপন্থার অভিযোগ বাড়ছে। যদিও রিপাবলিকানদের বিষয়ে এমন ধারণা আগের মতোই রয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে উভয় দলের প্রতি চরমপন্থী ধারণা তৈরি হওয়াটা উদ্বেগের বিষয়।
ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মনে করেন, নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান অ্যালেক্সান্ড্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ দলের আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করেন।
এছাড়া, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ৯ শতাংশ এবং বার্নি স্যান্ডার্সকে ৮ শতাংশ মানুষ দলের নেতা হিসেবে দেখতে চান।
তবে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ কোনো নেতার নাম বলতে পারেননি। তাদের মতে, এমন কোনো নেতা নেই যিনি দলের আদর্শকে পুরোপুরি তুলে ধরেন।
মিশিগানের সিনেটর এলিসা স্লটকিন-এর পরিচিতি এখনো অনেক কম।
জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ তাকে চেনেন না বা তার সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখেন না। দলের মধ্যে যারা তাকে চেনেন, তাদের মধ্যেও তার প্রতি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতি সমর্থন বিভিন্ন ডেমোগ্রাফিক গ্রুপে ভিন্ন।
নিজেদের ডেমোক্রেট হিসেবে পরিচয় দেন এমন মানুষের মধ্যে দলের প্রতি সমর্থন বেশি (৭২%), কিন্তু স্বতন্ত্র হিসেবে পরিচিতদের মধ্যে এই হার ৩৭ শতাংশ।
দলের নারী, সংখ্যালঘু এবং কলেজ ডিগ্রি নেই এমন ভোটারদের মধ্যেও নেতৃত্বের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখা যায়।
তবে শ্বেতাঙ্গ পুরুষ ও কলেজ ডিগ্রিধারীদের মধ্যে এই সমর্থন তুলনামূলকভাবে কম।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই জরিপ ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য একটি সতর্কবার্তা।
দলটিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে হবে এবং একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
একইসঙ্গে, দলের নীতি এবং আদর্শের বিষয়ে জনগণের মধ্যে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন