শিরোনাম: দক্ষিণ কোরিয়াতে পরিচয়, বন্ধুত্বের বাঁধন: এক কোরিয়ান দত্তক কন্যার জীবন বদলে দেওয়া এক মার্কিন সৈনিক।
কোরিয়া থেকে দত্তক নেওয়া লিন্সি ডিবেটস নামের এক নারীর জীবন, যিনি বেড়ে উঠেছেন আমেরিকায়, তাঁর শিকড়ের সন্ধানে দক্ষিণ কোরিয়াতে আসার পর এক মার্কিন সৈন্যের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়।
সেই বন্ধুত্বের গল্প, যা সময়ের সঙ্গে গভীর হয়েছে, সেই গল্পই এখন আলোচনার বিষয়।
লিন্সি যখন মাত্র ছয় মাসের শিশু, তখন তাঁকে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দত্তক নিয়েছিলেন এক মার্কিন পরিবার।
১৯৯০ এর দশকে আমেরিকার মিডওয়েস্টে বেড়ে ওঠা লিন্সি তাঁর সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয় নিয়ে সবসময় দ্বিধায় ভুগতেন।
কৈশোরে তিনি জানতে পারেন তাঁর জন্মপরিবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়।
জন্মপরিবারের সঙ্গে দেখা করার এই সুযোগ লিন্সি হাতছাড়া করতে চাননি।
জন্মপরিবারের কাছ থেকে তাঁর জীবনের অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে ভেবে তিনি রাজি হয়ে যান।
এরপর শুরু হয় চিঠি আদান-প্রদান।
২০০০ সালে, লিন্সি যখন ১৯ বছরের তরুণী, তখন সরকারি খরচে দক্ষিণ কোরিয়ার অন্য দত্তক সন্তানদের সঙ্গে সিউলে যাওয়ার সুযোগ হয় তাঁর।
যদিও তাঁর পালক বাবা-মাও যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু লিন্সি একা যেতেই মনস্থির করেন।
কোরিয়াতে ফিরে আসাটা তাঁর কাছে ছিল নিজের শিকড়ে ফেরার মতো।
যদিও সেখানে গিয়ে তিনি অন্য রকম এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন।
সবাই তাঁকে অন্য চোখে দেখছিল, যা তিনি আগে আমেরিকাতেও অনুভব করেছেন।
সিউলে দুই সপ্তাহের ভ্রমণ শেষে লিন্সি প্রথমবারের মতো তাঁর জন্মপরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।
তাঁরা সিউলের পরিবর্তে সিউল থেকে দু’ঘণ্টা দূরের ডেজিওনে থাকতেন।
সেখানে তিনি তাঁদের সঙ্গে ১০ দিন কাটান।
ভাষা ভিন্ন হওয়ার কারণে সেখানে অনেক আবেগপূর্ণ মুহূর্ত তৈরি হলেও, তা প্রকাশ করার মতো পরিস্থিতি ছিল না।
নিজের অনুভূতিগুলো বুঝতে লিন্সি এরপর সিউলের একটি আন্তর্জাতিক এলাকা ইটাওয়ানে যেতে শুরু করেন।
একদিন রাতে ইটাওয়ানের একটি বারে কয়েকজন আমেরিকান সৈন্যের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়।
তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বুঝতে পারেন, এই মানুষগুলো তাঁর মানসিক শান্তির কারণ হতে পারে।
তাঁদের সঙ্গেই আলাপচারিতার মধ্যে লিন্সি তাঁর জীবনের গল্প বলতে শুরু করেন।
তাঁদের মধ্যে ডগ গিস্ট নামের একজন বুঝতে পারেন লিন্সির বন্ধুত্বের প্রয়োজন।
এরপর থেকে ডগ লিন্সির পাশে ছিলেন সবসময়।
বার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ডগ লিন্সিকে তাঁর হোটেলে ফিরিয়ে দেন।
হোটেলের পরিবেশ দেখে তিনি লিন্সিকে সেখানে একা থাকতে দিতে রাজি হননি।
সেদিন রাতে তাঁরা সারা রাত গল্প করেন, তাঁদের পরিবারের কথা বলেন, তাঁদের জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
এরপর থেকেই তাঁরা ভালো বন্ধু হয়ে যান।
২০০২ সালে লিন্সি আবার দক্ষিণ কোরিয়াতে ফিরে আসেন, এবার নিজের পরিবারের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটানোর জন্য।
এবার ডগও তাঁর সঙ্গে ছিলেন, কারণ তিনি কোরীয় ভাষা জানতেন এবং লিন্সির পরিবারকে বুঝতে সাহায্য করতে পারতেন।
লিন্সির পরিবার ডগকে সাদরে গ্রহণ করে।
ডগের সহায়তায় লিন্সি তাঁর পরিবারের সঙ্গে গভীর আলোচনা করতে পেরেছিলেন, বিশেষ করে কেন তাঁকে দত্তক দেওয়া হয়েছিল, সেই বিষয়ে জানতে পারেন।
দিনের পর দিন কেটে যায়।
ডগ বিয়ে করেন, তাঁর একটি কন্যা সন্তান হয়।
ডগ ও তাঁর স্ত্রী লিন্সিকে তাঁদের মেয়ের গডমাদার করেন, যা লিন্সির কাছে ছিল অনেক সম্মানের।
লিন্সিও ডগের পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখেন।
এই বছর লিন্সি ও ডগের বন্ধুত্বের ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে।
লিন্সি এখন একজন ক্লিনিক্যাল সোশ্যাল ওয়ার্কার এবং মিনেসোটায় বসবাস করেন।
ডগ এখন তাঁর পরিবারের সঙ্গে জার্মানিতে থাকেন।
লিন্সি খুব শীঘ্রই তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে জার্মানি যাবেন।
আজও লিন্সি তাঁর অতীতের সেই কঠিন দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন, যখন ডগ তাঁর জীবনে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, ডগের কারণেই তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন, পৃথিবীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন