কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার চ্যালেঞ্জের মুখে মিত্রতা গড়ে তুলতে ইউরোপের দিকে ঝুঁকছেন। তিনি ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে খুব শীঘ্রই প্যারিস ও লন্ডন সফর করবেন।
শুক্রবার শপথ গ্রহণের পরেই কার্নি জানান, কানাডা কখনোই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হবে না। তিনি উল্লেখ করেন, কানাডার ভিত্তি তৈরি হয়েছে তিনটি জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মিলিত সংস্কৃতি- ফরাসি, ইংরেজি এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে। তাঁর এই মন্তব্যের মূল কারণ হলো, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী বাণিজ্য নীতি এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক ভালো হলেও, ট্রাম্পের নীতির কারণে কানাডার নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেক কানাডিয়ান এখন মার্কিন পণ্য বর্জন করার চেষ্টা করছেন। কার্নি সরকারও ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, কার্নির এই সফর ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার কারণেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরে কার্নি ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়াও, তিনি যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। উল্লেখ্য, কার্নি একসময় ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর ছিলেন।
প্যারিস ও লন্ডন সফরের পর কার্নি কানাডার আর্কটিক অঞ্চলের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে সেখানে যাবেন। এরপর তিনি অটোয়ায় ফিরে আসবেন এবং ধারণা করা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে কার্নি বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত, তবে সেক্ষেত্রে কানাডার সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান থাকতে হবে। তিনি এখনই ওয়াশিংটন সফরের পরিকল্পনা করছেন না, তবে দ্রুতই ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার আশা প্রকাশ করেছেন।
কানাডার ইতিহাসে বাণিজ্য সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে, দেশটির ৭৫ শতাংশের বেশি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। তাই বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও বহুমুখী করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির মোকাবিলায় ইউরোপীয় মিত্রদের সমর্থন কার্নি সরকারের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান