চীনের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে চীন সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি এবং অর্থনীতির গতি ধরে রাখাই এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য।
সম্প্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের উপর শুল্ক বৃদ্ধি করায় দেশটির বাণিজ্য খাতে নতুন করে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া’র বরাত দিয়ে জানা যায়, এই বিশেষ কর্মপরিকল্পনার আওতায় জনগণের আয় বৃদ্ধি, শিশুখাত খাতে ভর্তুকি প্রদান এবং পুরাতন গাড়ি ও ইলেকট্রনিক পণ্যের বিনিময়ে নতুন পণ্য কেনার সুযোগ তৈরি করা হবে।
চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াং এই মাসের শুরুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে দেশের অর্থনীতিকে “একটি বিশাল জাহাজের” সাথে তুলনা করে এটিকে “ভবিষ্যতের দিকে অবিরাম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার” অঙ্গীকার করেন।
তিনি এ বছর প্রায় ৫ শতাংশ জিডিপি (GDP) বৃদ্ধির উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন।
চীনের অর্থনীতি বর্তমানে দুর্বল ভোগ চাহিদা, অনিশ্চিত কর্মসংস্থান এবং স্থবির আবাসন খাতের মতো বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। আন্তর্জাতিক বাজারেও যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের মাধ্যমে চীনের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সকল পণ্যের উপর শুল্ক দ্বিগুণ করে ২০ শতাংশ করেছে। এর জবাবে চীনও মার্কিন কৃষি পণ্যের উপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছে, যা গত সপ্তাহ থেকে কার্যকর হয়েছে।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (National Bureau of Statistics – NBS) -এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে খুচরা বিক্রি বাণিজ্যে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ডিসেম্বরে এই হার ছিল ৩.৭ শতাংশ। রয়টার্স-এর অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসও মিলেছে।
ক্যাপিটাল ইকোনমিকস-এর অর্থনীতিবিদ ঝিচুন হুয়াং এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন, “সরকারের আর্থিক প্রণোদনার কারণে চীনের অর্থনীতি বছরের শুরুতে ভালো করেছে।
আমরা আশা করি আগামী মাসগুলোতে এই পুনরুদ্ধার অব্যাহত থাকবে, তবে অর্থনীতির ওপর আরও অনেক চাপ থাকায় নিকট ভবিষ্যতে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।”
বর্তমানে চীন মূল্যস্ফীতির পরিবর্তে ক্রমাগত deflition বা মূল্যহ্রাসের (দাম কমে যাওয়া) সমস্যায় ভুগছে, যার কারণে ভোক্তারা জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে আগ্রহ হারাচ্ছে।
কারণ তারা মনে করছে ভবিষ্যতে দাম আরও কমবে। ফলে মানুষের মধ্যে কেনাকাটার প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি বড় বাধা।
গত সপ্তাহে NBS জানায়, ফেব্রুয়ারিতে চীনের ভোক্তা মূল্য সূচক (Consumer Price Index – CPI) এক বছর আগের তুলনায় ০.৭ শতাংশ কমেছে।
শিল্প উৎপাদন, যা উৎপাদন ও খনিসহ বিভিন্ন শিল্পের উৎপাদন পরিমাপ করে, সেই ক্ষেত্রেও NBS জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ৫.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
রয়টার্সের পূর্বাভাস ছিল এই হার ৫.৩ শতাংশ। সাধারণত, চীনা ক্যালেন্ডারের চান্দ্র নববর্ষের প্রভাবের কারণে NBS জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির সম্মিলিত তথ্য প্রকাশ করে থাকে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন