লোহিত সাগরে উত্তেজনা: ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ। পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে লোহিত সাগরে উত্তেজনা আবারও বেড়েছে।

হুতি বিদ্রোহীরা সম্প্রতি একটি মার্কিন নৌবহরের ওপর হামলার দাবি করেছে, যার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রও ইয়েমেনে হামলা চালিয়েছে। উভয় পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি হামলায় পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নিয়েছে।

হুতি মুখপাত্র সোমবার জানিয়েছেন, তাদের যোদ্ধারা যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ইউএসএস হ্যারি ট্রুম্যান ও তার সঙ্গে থাকা যুদ্ধজাহাজগুলোর ওপর ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ও একটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি, তবে তারা হুতিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলে জানা গেছে।

গত কয়েকদিনে এই অঞ্চলে উত্তেজনা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের প্রতিবাদে হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েল-সংযুক্ত বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর ওপর হামলা চালানোর ঘোষণা দেয়।

এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে ব্যাপক হামলা চালায়, যাতে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। হুতিদের মুখপাত্র টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই হামলাকে ‘আমাদের দেশের ওপর চালানো মার্কিন আগ্রাসনের জবাব’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও পোস্ট করে জানায়, তারা ‘ইরান-সমর্থিত হুতি সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। হুতি নিয়ন্ত্রিত সাবা নিউজ এজেন্সি সোমবার ভোরে হুদাইদাহ বন্দরের কাছে দুটি বিমান হামলার খবর দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে তারা আরও জানায়, রবিবার সাদায় একটি ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্রেও হামলা চালানো হয়েছে, যার ফলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা দীর্ঘদিন ধরে লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। এই অঞ্চলের অস্থিরতা বিশ্ব বাণিজ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।

বিশেষ করে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে পণ্য পরিবহনের জন্য সুয়েজ খালের পরিবর্তে জাহাজগুলোকে আফ্রিকা মহাদেশ ঘুরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর হুতিরা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ পুনর্বহাল হওয়ার পর তারা আবারও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত জাহাজগুলোর ওপর হামলার ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে, শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুতিদের ওপর হামলার নির্দেশ দেন। রয়টার্স নিউজ এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি।

লোহিত সাগরের এই অস্থিরতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। সোমবার ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেল প্রতি ০.৬ শতাংশ বেড়ে ৭০.৯৯ ডলারে পৌঁছেছে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা