ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত গ্রিস দেশটি পর্যটকদের কাছে এক দারুণ গন্তব্য। দেশটির প্রতিটি দ্বীপ যেন একেকটি রত্নভাণ্ডার।
ইতিহাস, সংস্কৃতি, আর প্রকৃতির এক অপূর্ব মিশ্রণ রয়েছে এখানে। ২০২৩ সালে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক-এর করা পর্যটকদের ঘুরে আসার জন্য সেরা ৩১টি গ্রিক দ্বীপের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
চলুন, জেনে নিই বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য এই দ্বীপগুলো কতটা আকর্ষণীয় হতে পারে।
গ্রিসের দ্বীপগুলো যেন একেকটি জগৎ। কিছু দ্বীপ তার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত, যেমন প্রাচীন মন্দির আর দুর্গ।
কোনোটি আবার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, যেখানে সবুজের সমারোহ আর নীল সমুদ্রের খেলা চলে। কোনো কোনো দ্বীপে রয়েছে বিশেষ ধরনের আকর্ষণ, যেমন আগ্নেয়গিরি অথবা সাদা বালির সমুদ্র সৈকত।
১. নিসিরোস: আগ্নেয়গিরির অভিজ্ঞতা
যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য নিসিরোস একটি অসাধারণ জায়গা। এখানে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যেখানে হেঁটে বেড়ানোও সম্ভব।
এছাড়াও, এখানকার ছোট শহর মান্ড্রাকির রঙিন বাড়িগুলো আর বাইজেন্টাইন চার্চগুলোও পর্যটকদের মন জয় করে।
২. ক্যালিমনোস: পর্বতারোহণের স্বর্গ
ক্যালিমনোস দ্বীপটি একসময় স্পঞ্জ ডুবুরিদের জন্য পরিচিত ছিল, কিন্তু এখন এটি পর্বতারোহীদের পছন্দের জায়গা।
এখানে ৪,০০০ এর বেশি আরোহণের পথ রয়েছে। যারা খেলাধুলা ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি দারুণ একটি গন্তব্য।
৩. কোস: সাইকেলের দ্বীপ
কোসকে বলা হয় ‘সাইকেলের দ্বীপ’। এখানে ৬,৫০০ এর বেশি বাইক ভাড়ায় পাওয়া যায়।
দ্বীপটিতে সাইকেল চালানোর জন্য সুন্দর পথও রয়েছে। যারা স্বাস্থ্য সচেতন এবং প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা।
৪. টিলোস: ভুতুড়ে গ্রামের আকর্ষণ
টিলোস দ্বীপের মিক্রো চোরিও গ্রামটি এখন পরিত্যক্ত, কিন্তু এর নীরবতা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
এখানকার সাদা দেয়াল আর পাথরের বাড়িগুলো হেঁটে ঘোরার মতো।
৫. রোডস: বনের মাঝে এক শান্ত স্থান
ঐতিহাসিক স্থান আর সুন্দর সমুদ্র সৈকতের জন্য রোডস খুবই জনপ্রিয়। এখানকার ‘সেভেন স্প্রিংস’ একটি বিশেষ স্থান, যেখানে বনের মাঝে ঝর্ণা আর সবুজ গাছপালা দেখা যায়।
৬. সিমির আকর্ষণ
সিমিতে রয়েছে নিওক্লাসিক্যাল স্থাপত্যের সুন্দর শহর এবং মনোরম একটি মঠ।
যারা শান্ত পরিবেশে ঘুরতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই দ্বীপটি একটি ভালো পছন্দ হতে পারে।
৭. কার্পাথোস: ঐতিহ্যের ছোঁয়া
কার্পাথোস দ্বীপটি তার ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত।
এখানকার স্থানীয় মহিলারা এখনো তাদের পুরনো পোশাক আর গয়না পরেন। এখানকার স্থানীয় খাবার আর লোকনৃত্যও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
৮. লেফকাডা: নৌভ্রমণের সুযোগ
যারা সমুদ্র ভালোবাসেন, তাদের জন্য লেফকাডা একটি চমৎকার জায়গা।
এখানে নৌকায় করে বিভিন্ন দ্বীপে ঘুরে বেড়ানো যায়। এখানকার শান্ত উপসাগর আর সবুজ দ্বীপগুলো খুবই সুন্দর।
৯. প্যাকসোস: নীল জলের আকর্ষণ
প্যাকসোস দ্বীপটি ছোট হলেও এর চারপাশে রয়েছে সুন্দর সমুদ্র সৈকত আর স্বচ্ছ জল।
নৌকায় করে এখানে ঘুরে বেড়ানো এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
১০. করফু: পাহাড়ের উপরে গ্রাম
করফু দ্বীপটি তার ভেনিসীয় স্থাপত্য আর সুন্দর সমুদ্র সৈকতের জন্য পরিচিত।
এখানকার পাহাড়ের উপরে অবস্থিত পুরনো পেরিথিয়া গ্রামটিও একটি বিশেষ আকর্ষণ।
১১. জাকিন্থোস: নীল গুহা
জাকিনথোসের উত্তর উপকূলের সাদা পাথরের পাহাড় আর নীল গুহাগুলো পর্যটকদের মন জয় করে।
এখানে নৌকায় করে গুহাগুলো ঘুরে দেখা যায়।
১২. কেফালোনিয়া: কায়াকিংয়ের অভিজ্ঞতা
কেফালোনিয়া দ্বীপটি সবুজ পাহাড় আর সমুদ্রের জন্য বিখ্যাত।
এখানে কায়াকিং করার সুযোগ আছে, যা পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয়।
১৩. সামোথ্রাকি: প্রাচীন দেবভূমি
সামোথ্রাকি একটি ছোট দ্বীপ, যেখানে প্রাচীন দেব-দেবীর মন্দির ছিল।
এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অসাধারণ।
১৪. লেমনোস: গ্রিক মরুভূমি
লেমনোস দ্বীপে রয়েছে এক ধরণের মরুভূমি, যা পর্যটকদের কাছে একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয়।
এখানকার বালুকাময় টিলাগুলো দেখতে খুব সুন্দর।
১৫. ইকারিয়া: যেখানে জীবন দীর্ঘ
ইকারিয়া দ্বীপটি দীর্ঘ জীবনের জন্য পরিচিত। এখানকার মানুষজন সাধারণত অনেক দিন বাঁচে।
এখানকার উৎসব আর স্থানীয় খাবার পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
১৬. লেসবোস: ঐতিহ্যপূর্ণ পানীয়
লেসবোসে তৈরি হয় গ্রিসের জনপ্রিয় পানীয় ‘উজো’। এখানে এই পানীয় তৈরির জাদুঘরও রয়েছে।
১৭. সান্তোরিনি: আগ্নেয়গিরির তীরে
সান্তোরিনি দ্বীপটি তার সুন্দর গ্রাম আর সাদা বাড়িগুলোর জন্য বিখ্যাত।
এখানকার আগ্নেয় মাটির কারণে এখানকার দ্রাক্ষাক্ষেতের আঙ্গুর দিয়ে তৈরি হয় বিশেষ ওয়াইন।
১৮. সিরোস: গ্রিক ব্লুজের শহর
সিরোস দ্বীপে গ্রিক ব্লুজ বা রেবেটিকো গানের জন্ম।
এখানকার পুরনো শহর আর ক্যাফেগুলো পর্যটকদের ভালো লাগে।
১৯. সিফনোস: গ্রিক খাবার
সিফনোস দ্বীপটি গ্রিক রান্নার জন্য বিখ্যাত।
এখানে স্থানীয় পদ্ধতিতে রান্না করা খাবার পাওয়া যায়।
২০. টিনোস: খাদ্য উৎসব
টিনোস দ্বীপে প্রতি বছর খাদ্য উৎসব হয়, যেখানে স্থানীয় খাবার পরিবেশন করা হয়।
যারা ভালো খাবার ভালোবাসেন, তাদের জন্য এই দ্বীপটি অসাধারণ।
২১. মিলোস: রঙিন বাড়ি
মিলোস দ্বীপটি তার রঙিন বাড়ি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
এখানকার সৈকত আর সমুদ্রও খুব সুন্দর।
২২. ন্যাক্সোস: মার্বেলের দ্বীপ
ন্যাক্সোস দ্বীপে প্রাচীনকালে মার্বেল খোদাই করা হতো।
এখানে প্রাচীন যুগের কিছু স্থাপত্য নিদর্শনও রয়েছে।
২৩. অ্যাগিস্ট্রি: স্বচ্ছ জলের সৈকত
অ্যাগিস্ট্রি এথেন্সের কাছে অবস্থিত একটি ছোট দ্বীপ, যেখানে স্বচ্ছ জলের সৈকত রয়েছে।
এখানে সাঁতার কাটার দারুণ সুযোগ আছে।
২৪. পোরোস: লেবুর বন
পোরোস দ্বীপের কাছে লেবুর বন রয়েছে, যা মে মাসে ফুল ফোটার সময়ে এক অসাধারণ সুবাস ছড়ায়।
২৫. স্পেটসিস: নৌ বিদ্রোহের স্মৃতি
স্পেটসিস দ্বীপে গ্রিক নৌ বিদ্রোহের এক নারী সেনানীর বাস ছিল।
এখানে তার বাড়িটি এখন জাদুঘর হিসেবে খোলা হয়েছে।
২৬. এজিনা: প্রাচীন গ্রিসের স্মৃতিচিহ্ন
এজিনা দ্বীপে প্রাচীন গ্রিসের একটি মন্দির রয়েছে, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
২৭. হাইড্রা: গাড়িমুক্ত দ্বীপ
হাইড্রা একটি পাহাড়ি দ্বীপ, যেখানে কোনো গাড়ি চলে না।
এখানে হেঁটে বা ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়ানো যায়।
২৮. স্কোপেলোস: বুনো ফুলের পথ
স্কোপেলোস দ্বীপে বুনো ফুলের পথ ধরে হেঁটে বেড়ানো এক দারুণ অভিজ্ঞতা।
এখানকার পাহাড় আর সমুদ্রও খুব সুন্দর।
২৯. স্কাইরোস: বিরল ঘোড়া
স্কাইরোস দ্বীপে এক ধরনের ছোট ঘোড়া দেখা যায়, যা এখানকার সংস্কৃতির একটি অংশ।
৩০. স্কিয়াথোস: সমুদ্র সৈকত
স্কিয়াথোস দ্বীপে ৬২টির বেশি সমুদ্র সৈকত রয়েছে, যা বিভিন্ন ধরণের মানুষের জন্য উপযুক্ত।
৩১. আলোনিসোস: জলজ জীবন
আলোনিসোস দ্বীপটি জলজ জীবনের জন্য বিখ্যাত।
এখানে ডলফিন আর বিরল প্রজাতির সিল মাছ দেখা যায়।
গ্রিসের এই দ্বীপগুলো প্রত্যেকটিই তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্য।
যারা ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রকৃতি, অথবা ভালো খাবারের স্বাদ নিতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য গ্রিস হতে পারে একটি অসাধারণ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক