যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্র ‘নোয়া’-তে কর্মী ছাঁটাই, বাংলাদেশের জলবায়ুর ওপর প্রভাবের শঙ্কা। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA) বা ‘নোয়া’-এর কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘটনা বিশ্বজুড়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
জানা গেছে, সম্প্রতি এক হাজারের বেশি বিজ্ঞানী ও কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে সমুদ্র পর্যবেক্ষণ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং জলবায়ু গবেষণা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশের জলবায়ুর ওপরও।
নোয়া মূলত সমুদ্র এবং আবহাওয়ার ওপর গবেষণা করে থাকে। সমুদ্রের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে জাহাজ চলাচলের পথ নির্ধারণ করা, মৎস্য শিকারের উন্নতিসাধন এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করা—এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে এই সংস্থাটি। কিন্তু কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে এসব কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, হিদার ওয়েলচ নামের একজন বিজ্ঞানীকে ৯০ মিনিটের মধ্যে জিনিসপত্র গুছিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করতে বলা হয়। তিনি প্রায় এক দশক ধরে নোয়া-তে কাজ করেছেন এবং সামুদ্রিক প্রাণীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের তাপমাত্রা বাড়ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটি গুরুতর লক্ষণ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গত কয়েক বছরে সমুদ্রের তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। এর ফলে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসহ বিভিন্ন ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে।
এরই মধ্যে, সমুদ্র স্রোতের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারা দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা উত্তর গোলার্ধের আবহাওয়ার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে নোয়া’র মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার কর্মী ছাঁটাই নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নোয়া-র প্রধান কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো সমুদ্র পর্যবেক্ষণ করা। এই সংস্থাটির সংগ্রহ করা তথ্য ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস তৈরি করা হয়, যা ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে।
উদাহরণস্বরূপ, এই তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয়। কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে, এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ফলে, ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে, যা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলবে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে এল নিনো এবং লা নিনার মতো বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট এই প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার ধরনে পরিবর্তন আসে। নোয়া এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে পূর্বাভাস দিয়ে থাকে, যা বৈশ্বিক বাজারেও প্রভাব ফেলে।
কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে এল নিনো এবং লা নিনার মতো বিষয়গুলো সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়বে, যা বাংলাদেশের জলবায়ুর ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, এল নিনো ও লা নিনার প্রভাবে বাংলাদেশে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণে পরিবর্তন হতে পারে, যা কৃষি ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।
তবে, এই পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখা যাচ্ছে চীন সহ অন্যান্য কয়েকটি দেশে। তারা সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তথ্যই শক্তি। তাই, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র যদি সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা থেকে দূরে সরে আসে, তবে অন্যান্য দেশগুলো সেই জায়গা দখল করতে পারে।
নোয়া-এর কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে বাংলাদেশের জলবায়ু এবং অর্থনীতিতে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা এখনই বলা কঠিন। তবে, বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে, উন্নত দেশগুলোর এমন সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে উদ্বেগের কারণ।
তথ্য সূত্র: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এবং বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা।