ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী কয়েক দশকে হৃদরোগের মারাত্মক বৃদ্ধি হতে পারে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় এমনটাই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমান জলবায়ু পরিস্থিতি চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ হৃদরোগের সংখ্যা দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ার কারণে প্রতি বছর সুস্থ জীবনের প্রায় ৪৯,৪৮৩ বছর মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হারাচ্ছে।
গবেষণাটি ২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার রোগ বিষয়ক তথ্যভাণ্ডারের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, হৃদরোগের কারণে হওয়া অসুস্থতা এবং মৃত্যুর ৭.৩ শতাংশের জন্য দায়ী ছিল চরম আবহাওয়ার পরিস্থিতি।
গবেষকরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি আরও বাড়বে। গরম আবহাওয়ায় শরীরকে শীতল রাখতে হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়।
ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি মারাত্মক হতে পারে।
অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পেং বি বলেন, “গরম আবহাওয়ার সময় আমাদের হৃদপিণ্ডকে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই অতিরিক্ত চাপ বিপদজনক হতে পারে।”
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক গবেষক, জিংওয়েন লি জানান, যদিও গবেষণাটি অস্ট্রেলিয়ার ওপর কেন্দ্র করে করা হয়েছে, তবে তাপমাত্রা বাড়লে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে—এই বিষয়টি বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত।
তিনি আরও যোগ করেন, “আমাদের গবেষণার পদ্ধতি ভবিষ্যতের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং প্রতিরোধের কৌশল তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
গবেষকরা মনে করেন, মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে এবং উপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে উচ্চ তাপমাত্রার প্রভাব কমানো সম্ভব।
অধ্যাপক বি বলেন, “শহরগুলোতে শীতলীকরণ পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রচারণা এবং গরম আবহাওয়ার সময় জরুরি অবস্থা মোকাবিলার মতো পদক্ষেপের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।”
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের দেশেও তাপমাত্রা বাড়ছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে।
বিশেষ করে গরমের সময়ে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়। তাই, এই বিষয়ে এখনই সচেতন হওয়া এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে কার্বন নিঃসরণ কমানোর পাশাপাশি, জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
সেইসঙ্গে, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা