এভারগ্রেডস: আমেরিকার এক বিস্ময়কর জলজ জগৎ। ফ্লোরিডার দক্ষিণে অবস্থিত এভারগ্রেডস ন্যাশনাল পার্ক, যা আমেরিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান।
এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও জীববৈচিত্র্য একে করেছে অনন্য। বিশাল জলরাশি আর সবুজ ঘাসের সমাহার এই স্থানটিকে দিয়েছে এক ভিন্ন পরিচয়।
এটি যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি, যা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এভারগ্রেডসের বিশাল এলাকাটি প্রায় বাংলাদেশের একটি জেলার সমান।
এখানকার জলধারা কিসিম্মি নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে বিশাল লেক ওকেচোবি হয়ে ধীরে ধীরে দক্ষিণ দিকে বয়ে যায়। এই জলের প্রবাহই এভারগ্রেডসের বাস্তুতন্ত্র তৈরি করেছে।
এখানকার প্রকৃতি এতটাই বৈচিত্র্যপূর্ণ যে, এটি উত্তর আমেরিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যের স্থান হিসেবে পরিচিত। এখানে এমন সব উদ্ভিদ ও প্রাণী দেখা যায় যা সত্যিই অসাধারণ।
এভারগ্রেডসের ইতিহাসে রয়েছে আদিবাসী আমেরিকান উপজাতি ক্যালুসার বসবাস। ষোড়শ শতাব্দীতে স্প্যানিশদের আগমনের আগে তারা এখানে হাজার বছর ধরে বসবাস করত।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ইউরোপীয়দের আগ্রাসন, বসতি স্থাপন এবং রোগের কারণে তাদের সংখ্যা অনেক কমে যায়। একসময়, এভারগ্রেডসকে ফ্লোরিডার একটি “নোংরা পশ্চাৎভূমি” হিসাবে দেখা হতো, যেখানে ভয়ঙ্কর সরীসৃপ এবং অবাঞ্ছিত মানুষের বাস ছিল।
এমনকি এটিকে “জঞ্জাল” পরিষ্কার করারও প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে, ১৯47 সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান এভারগ্রেডস ন্যাশনাল পার্ক তৈরি করেন।
বর্তমানে, এটি আমেরিকার বৃহত্তম উপক্রান্তীয় বন্য এলাকা হিসেবে পরিচিত। এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান, আন্তর্জাতিক জীবমণ্ডল সংরক্ষণ এলাকা এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্বসম্পন্ন একটি জলাভূমি।
প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ এখানে ভ্রমণ করে। পর্যটকদের জন্য এভারগ্রেডস আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এখানে রয়েছে বিভিন্ন ব্যবস্থা।
এখানকার প্রধান আকর্ষণগুলো হলো : শার্ক ভ্যালি, এভারগ্রেডস সিটি, চোকোলোস্কে এবং ফ্লেমিংগো। এখানে ভ্রমণকারীরা বাইক চালানো, নৌকাবিহার, হাইকিং এবং বন্যজীবন পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান।
পর্যটকদের সুবিধার জন্য এখানে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় আয়োজন করা হয়। এভারগ্রেডসের অন্যতম আকর্ষণ হলো এর বন্যজীবন।
এখানে কুমির, প্যান্থার, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং সামুদ্রিক প্রাণী দেখা যায়। যারা প্রকৃতি ও বন্যজীবন ভালোবাসেন, তাদের জন্য এভারগ্রেডস একটি আদর্শ স্থান।
এখানে আসা পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় সব ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের নৌকায় ভ্রমণ করা যায়, যা এখানকার প্রকৃতির সৌন্দর্য আরও ভালোভাবে উপভোগ করতে সাহায্য করে।
এভারগ্রেডসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ। দিগন্ত বিস্তৃত ঘাসভূমি, আকাশে মেঘের আনাগোনা, আর বিভিন্ন পাখির কলরব – সব মিলিয়ে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি হয়, যা ভ্রমণকারীদের মন জয় করে।
এখানকার শান্ত ও স্নিগ্ধ পরিবেশ মানুষকে প্রকৃতির কাছাকাছি নিয়ে আসে। এভারগ্রেডসের এই আকর্ষণীয় জগৎ শুধু আমেরিকার নয়, বরং সারা বিশ্বের প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি বিশেষ স্থান।
প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে, সবাই একবারের জন্য হলেও এখানে আসতে পারেন। তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লিজার