ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে মন্দা দেখা দিতে পারে, সেই বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি)। সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই বাণিজ্য নীতির ফলে শুধু আমেরিকাই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যেতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি আবারও বাড়তে শুরু করতে পারে।
ওইসিডি’র এই মূল্যায়নকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এটি ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে প্রথম বিস্তৃত পর্যালোচনা। প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে আমেরিকার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর পাশাপাশি, বাণিজ্য অংশীদার দেশগুলোও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ায় বিশ্বজুড়ে ব্যবসার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এর ফলস্বরূপ, ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করছেন, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুল্ক আরোপের ফলে যদি পরিস্থিতি এমনই চলতে থাকে, তবে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর।
আমদানি শুল্ক বাড়লে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব বাড়বে, তেমনি বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, মানুষের আয় এবং নিয়মিত কর রাজস্বের ওপর এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া বাণিজ্য খরচও বাড়বে, যা ভোক্তাদের জন্য আমদানি করা পণ্যের এবং ব্যবসার জন্য কাঁচামালের দাম বাড়িয়ে দেবে।
ওইসিডি তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আমেরিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগামী বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে। তাদের ধারণা, ২০২৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির বৃদ্ধি হবে মাত্র ২.২ শতাংশ, এবং ২০২৬ সালে তা আরও কমে ১.৬ শতাংশে দাঁড়াবে। যেখানে গত বছর দেশটির অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ছিল ২.৮ শতাংশ।
বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রেও একই ধরনের মন্দা দেখা যেতে পারে। চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.১ শতাংশ, যা আগামী বছর আরও কমে ৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।
অন্যদিকে, শুল্কের কারণে আমেরিকার বাজারে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওইসিডির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে মূল্যস্ফীতি হতে পারে ২.৮ শতাংশ, যা বর্তমানে ২.৫ শতাংশ। এছাড়া, ২০২৬ সালেও মূল্যস্ফীতি ২.৬ শতাংশে থাকতে পারে।
তবে, এই পরিস্থিতিতে চীন তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সরাসরি শিকার হওয়া সত্ত্বেও চীন অভ্যন্তরীণ ব্যয় বাড়ানোর জন্য একটি বিশেষ কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যা তাদের অর্থনীতিকে কিছুটা হলেও স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে।
এই পরিস্থিতিতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, অনেক দেশ যেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সুদের হার কমাচ্ছে, সেখানে শুল্কের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়লে তাদের সুদের হার বেশি দিন ধরে ধরে রাখতে হতে পারে। এর ফলে ব্যবসা ও ভোক্তাদের উপর দীর্ঘমেয়াদি চাপ সৃষ্টি হবে।
এই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাণিজ্য এবং রেমিট্যান্সের ওপর এর সম্ভাব্য প্রভাব। বিশ্ব অর্থনীতির এই মন্দা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে।
এছাড়া, বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়লে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণেও পরিবর্তন আসতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং সেই অনুযায়ী নীতি গ্রহণ করা জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন