চীনের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি তথ্যে অর্থনীতির দুর্বলতা এবং বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতার মধ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সি.সি.পি)-র কেন্দ্রীয় কমিটি ও দেশটির স্টেট কাউন্সিল যৌথভাবে এই পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, কর্মীদের বেতন বৃদ্ধি এবং আর্থিক চাপ কমানোর ওপর জোর দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর প্রক্রিয়া উন্নত করা, শিশু যত্ন-এর জন্য ভর্তুকি প্রদান, বাড়ির মালিকদের জন্য আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর পণ্য ও শীতকালীন পর্যটনের মতো নতুন বাজার তৈরি করা।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর মুখপাত্র ফু লিংহুই জানিয়েছেন, অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে, তবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো রয়েছে। তিনি বলেন, “বহিরাগত পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, অভ্যন্তরীণ চাহিদা যথেষ্ট নয়, কিছু কোম্পানি উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, এবং অর্থনীতির ধারাবাহিক পুনরুদ্ধারের ভিত্তি এখনো দুর্বল।”
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া চীনের ‘টু সেশনস’ রাজনৈতিক বৈঠকের পরেই এই ঘোষণা আসে, যেখানে সরকার চলতি বছরে ৫ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
গত মাসের ভোক্তা মূল্য সূচক বা কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই)-এ মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হলো। যদিও খুচরা বিক্রি আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে, কিন্তু বেকারত্ব গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং মাঝারি ও বড় শহরগুলোতে বাড়ির দাম কমেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে চীনের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ শতাংশ। যদিও এই হার ১৯৯০ সালের পর থেকে, কোভিড পরিস্থিতি বাদ দিলে, সবচেয়ে কম।
অর্থনীতির এই দুর্বলতার পেছনে রয়েছে দেশটির আবাসন বাজারের সংকট, কোভিড-পরবর্তী সময়ে মানুষের কম খরচ করা এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রেকর্ড বেকারত্ব।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ চীনের অর্থনীতির জন্য একটি বড় ঝুঁকি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের রফতানির ওপর শুল্ক আরও বাড়াতে পারে এবং অন্যান্য দেশকেও একই পথে হাঁটতে চাপ দিতে পারে।
চীনের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই শুল্কের কারণে বাণিজ্য ঘাটতি আরও বাড়তে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান