একশো বছর আগের এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়, যা আমেরিকার ইতিহাসে ‘ট্রাই-স্টেট টর্নেডো’ নামে পরিচিত ছিল, সেটি আজও মানুষের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। ১৯২৫ সালের ১৮ই মার্চ তারিখে এই ঘূর্ণিঝড়টি আমেরিকার মিসৌরি, ইলিনয় এবং ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে আঘাত হানে।
এটির ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, প্রায় চার ঘণ্টা ধরে ৩৫০ কিলোমিটার পথজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছিল। এই ঘূর্ণিঝড়ে ৬৯৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং আহত হয়েছিল দুই হাজারের বেশি মানুষ।
আধুনিক পরিমাপ অনুযায়ী, এই টর্নেডোর বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ২৬০ মাইলের বেশি, যা এটিকে একটি F5 ক্যাটাগরির ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত করে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মিসৌরির আনাপোলিস, ইলিনয়ের গোরহাম ও মারফিসবোরো, এবং ইন্ডিয়ানার গ্রিফিথ শহরগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
মারফিসবোরোতে, ১১ বছর বয়সী ওথেল্লা সিলভি তার বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরে থাকা সত্ত্বেও, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে চারিদিকে ধ্বংসস্তূপ ছাড়া কিছুই দেখতে পায়নি। এমনকি লোগান স্কুলের মাঠের একটি গাঢ় সবুজ মেপল গাছের গুঁড়িতে একটি কাঠের তক্তা এমনভাবে ঢুকে গিয়েছিল যে, সেটি একজন মানুষের ওজনও বহন করতে পারতো।
সে সময়ে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়ার মতো কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা ছিল না। ফলে, মানুষজন কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছিল। খবর পাওয়া মাত্রই রেড ক্রস ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসে এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
মারাত্মক এই ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মারফিসবোরো শহর। এখানকার একটি স্কুলের ৩৮ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছিল। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে নিহতদের স্মরণে স্থানীয়ভাবে লেখা হয়েছিল একটি শোকগাঁথা, যা সেই সময়ের মানুষের শোক ও কষ্টের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছিল।
দুর্ঘটনার পর শহরটি ধীরে ধীরে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। ওথেল্লা সিলভি ও তার পরিবারের সদস্যরাও তাদের বাড়ি পুনর্গঠন করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প আজও মানুষকে সাহস জোগায়।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ট্র্যাজেডি বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। যদিও বাংলাদেশে এই ধরনের ঘূর্ণিঝড় তুলনামূলকভাবে কম হয়, তবুও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস