মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদানি শুল্ক আরোপের নীতি নিয়ে ক্রমশ বাড়ছে উদ্বেগ। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে দেশটির অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেক মার্কিনি।
যদিও ট্রাম্পের দাবি, শুল্ক আরোপের ফলে দেশের অর্থনীতি লাভবান হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর জন্য হ্যারিস পোল নামক একটি সংস্থা এই জরিপটি পরিচালনা করে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭২ শতাংশ মানুষ শুল্ক আরোপের বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একই জরিপে এই সংখ্যা ছিল ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শুল্ক নিয়ে মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে বিদেশি পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেন। এর ফলে চীন, কানাডা এবং মেক্সিকোর মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এমনকি, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এই পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়ে জানিয়েছে, এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং শ্রমিকদের বেতনও বৃদ্ধি পাবে।
তবে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৬৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
জরিপের ফলাফলে রাজনৈতিক বিভাজনও স্পষ্ট হয়েছে। ডেমোক্রেট ও স্বতন্ত্রদের তুলনায় রিপাবলিকানদের মধ্যে উদ্বেগের হার তুলনামূলকভাবে কম।
জরিপে অংশ নেওয়া ৯০ শতাংশ ডেমোক্রেট এবং ৬৯ শতাংশ স্বতন্ত্র শুল্ক নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। অন্যদিকে, রিপাবলিকানদের মধ্যে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৭ শতাংশ।
অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। ৮৯ শতাংশ ডেমোক্রেট এবং ৭৫ শতাংশ স্বতন্ত্র মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সেখানে ৬৫ শতাংশ রিপাবলিকান এই উদ্বেগের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন।
আবাসন খরচ নিয়ে মার্কিনিদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। জরিপে অংশ নেওয়া ৯১ শতাংশ ডেমোক্রেট, ৮৮ শতাংশ স্বতন্ত্র এবং ৮২ শতাংশ রিপাবলিকান জানিয়েছেন, তারা জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে চিন্তিত।
এদিকে, বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতির প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যুতের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিলে ট্রাম্পও কানাডা থেকে আমদানি করা ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেন।
তবে, অধিকাংশ মার্কিনি মনে করেন, এই শুল্ক বেশি দিন স্থায়ী হবে না। জরিপে অংশ নেওয়া ৫৯ শতাংশ মানুষ এমনটা মনে করেন।
এর মধ্যে ৬১ শতাংশ রিপাবলিকান, ৬০ শতাংশ ডেমোক্রেট এবং ৫৫ শতাংশ স্বতন্ত্র রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক আরোপের ফলে অর্থনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান