যুক্তরাজ্যের কুখ্যাত শিশু হত্যাকারী লুসি লেটবি তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত বন্ধের আবেদন জানিয়েছেন। লেটবি’র আইনজীবীরা বলছেন, নতুন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে যা তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রায়কে দুর্বল করে দেয়।
তাদের মতে, এই তদন্তের কারণে বিপুল পরিমাণ করদাতার অর্থ অপচয় হচ্ছে।
২০১৫ ও ২০১৬ সালের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের কাউন্টেস অফ চেস্টার হাসপাতালে সাতজন শিশুকে হত্যা এবং আরও সাতজনকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে লুসি লেটবিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। বর্তমানে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
তবে, নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসা লেটবি ইতোমধ্যে আপিল বিভাগে তার রায় পরিবর্তনের দুটি আবেদন জানালেও তা খারিজ হয়ে যায়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, লেটবির আইনজীবীরা সম্প্রতি পাবলিক ইনকোয়ারি বা সরকারি তদন্ত বন্ধের জন্য বিচারক লেডি জাস্টিস থিরওয়ালের কাছে আবেদন করেছেন। আগামী বুধবার এই তদন্ত শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
আইনজীবীরা বলছেন, লেটবির দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টির পর্যালোচনার ফলাফল আসার আগে তদন্ত চালিয়ে গেলে, বিচারকের চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি ‘অপ্রাসঙ্গিক এবং সম্ভবত নির্ভরযোগ্য হবে না’।
তারা আরও উল্লেখ করেন, এ পর্যন্ত এই তদন্তে এক কোটি পাউন্ডের বেশি খরচ হয়েছে। লেটবির আইনজীবীরা দাবি করেন, তাদের কাছে এমন ‘অকাট্য প্রমাণ’ রয়েছে যা প্রমাণ করে যে লুসি লেটবির বিরুদ্ধে দেওয়া রায়টি সঠিক নয়।
তাই, তদন্ত স্থগিত করে পর্যালোচনার ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করা উচিত।
এদিকে, ফৌজদারি মামলার পর্যালোচনা কমিশন (সিসিআরসি) লেটবির পক্ষে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের দেওয়া নতুন উপাদানগুলো খতিয়ে দেখছে।
কাউন্টেস অফ চেস্টার হাসপাতালের আইনজীবী অ্যান্ড্রু কেনেডি জানান, স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী ও তদন্ত কমিটির প্রধানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তদন্ত স্থগিতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। তিনি বিচারককে তদন্ত বন্ধ না করার অনুরোধ করে বলেন, এটি বিলম্বিত হলে পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য বিষয়ক পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘কেয়ার কোয়ালিটি কমিশন’ এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল জানিয়েছে, ২০১৬ সালে তারা যখন এই মামলার সঙ্গে জড়িত হয়, তখন তাদের আরও ‘পেশাদার কৌতূহল’ দেখানো উচিত ছিল।
রয়্যাল কলেজ অফ পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হয়ে নবজাতক ওয়ার্ডের যে পর্যালোচনা করেছিল, তা ছিল ‘ভুল’ এবং ‘অনুচিত’।
স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা বিভাগ শোকাহত পরিবারগুলোর কাছে ক্ষমা চেয়ে জানায়, ঘটনার জন্য তারা ‘চূড়ান্তভাবে দায়ী’। বিভাগের আইনজীবী বলেন, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা এড়াতে তারা তদন্তের মাধ্যমে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
লেটবির আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সাতটি দেশের ১৬ জন বিশেষজ্ঞ একটি পর্যালোচনা করেছেন। তাদের মতে, শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় ‘ক্ষতিকর কাজের কোনো প্রমাণ’ পাওয়া যায়নি, তবে চিকিৎসকদের ‘ভুলত্রুটি’ ছিল।
এই বিশেষজ্ঞ দল প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনার ‘আরেকটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা’ দিয়েছে এবং নবজাতক বিভাগে চিকিৎসার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
লেটবির আইনি দল জানিয়েছে, তারা খুব শীঘ্রই সিসিআরসি-এর কাছে এই প্রমাণ জমা দেবে এবং কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। তারা আরও জানায়, সিসিআরসি সম্ভবত দ্রুতই বিষয়গুলো বিবেচনা করে আপিল বিভাগে পাঠাবে।
আপিল বিভাগ যদি মনে করে রায় পুনর্বিবেচনার যোগ্য, তাহলে তারা রায় বাতিল করতে পারে।
অন্যদিকে, চেশায়ার পুলিশ জানিয়েছে, তারা শিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অবহেলার কারণে মৃত্যুর অভিযোগের তদন্ত করছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই তদন্ত লুসি লেটবির একাধিক হত্যা ও হত্যা চেষ্টার রায়ের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে কাউন্টেস অফ চেস্টার ও লিভারপুল উইমেন্স হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে অন্যান্য শিশুদের মৃত্যু ও অসুস্থতা নিয়েও তদন্ত চলছে।
প্রসঙ্গত, বিচারপতি থিরওয়াল গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শিশুদের মৃত্যু ও অসুস্থতার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত করছেন। চলতি বছরের শেষ দিকে তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান