ঢাকা, [তারিখ] – উত্তর মেসিডোনিয়ার একটি নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কোচানি শহরে ‘পালস’ নামের ওই ক্লাবে আগুন লেগে ৫৯ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই তরুণ এবং যুবক।
এই মর্মান্তিক ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে হাজার হাজার মানুষ।
ঘটনার সূত্রপাত হয় রবিবার ভোরে, যখন ডিএনকে নামের একটি জনপ্রিয় হিপ-হপ দলের কনসার্ট চলছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আতশবাজির ফুলকি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় এবং মুহূর্তের মধ্যে তা চারিদিকে ছড়িয়ে পরে।
ক্লাবের ভেতরে অতিরিক্ত ভিড় ছিল, যার ফলে হুড়োহুড়ি করে বের হওয়ার সময় অনেকে পদদলিত হয়ে মারা যায়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে চিকিৎসার জন্য গ্রিস, তুরস্ক, সার্বিয়া এবং বুলগেরিয়ায় পাঠানো হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কান্না আর ক্ষোভ এখন সেখানকার বাতাসে। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ১৬ বছরের জোভান।
কোচানির কেন্দ্রীয় চত্বরে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়ে জোভান বলেন, “আমি চাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হোক। আমাদের পরিবর্তন দরকার, কারণ এই দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত।”
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ক্লাবটি ছিল একটি পুরনো কার্পেট গুদামঘর। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল খুবই দুর্বল।
বিল্ডিংটিতে ফায়ার অ্যালার্ম ছিল না, ছিল মাত্র দুটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। এছাড়া, ছাদ তৈরি করা হয়েছিল সহজে জ্বলনশীল উপাদান দিয়ে।
এমনকি, পেছনের দিকের একমাত্র ধাতব দরজাটি ছিল তালাবদ্ধ এবং ভেতরে কোনো হাতল ছিল না। অগ্নিনির্বাপক গাড়ি যাওয়ারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী, যিনি ক্লাবটির লাইসেন্স দেওয়ার সময় দায়িত্বে ছিলেন।
এছাড়া, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তাসহ ক্লাব ব্যবস্থাপককেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, “গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, কারণ অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে ঘুষ ও দুর্নীতির যোগসূত্র থাকতে পারে।”
উত্তর মেসিডোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী হ্রিস্টিজান মিকোস্কি এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ক্লাবটির লাইসেন্স ছিল অবৈধ এবং তা ঘুষের বিনিময়ে পাওয়া গিয়েছিল।
কোচানির সাবেক মেয়র র্যাতকো দিমিত্রোভস্কি ক্লাবটিকে নিরাপত্তা মানদণ্ড পূরণ করতে না পারায় এর অনুমতি দিতে রাজি হননি।
প্রধানমন্ত্রী মিকোস্কি জানিয়েছেন, নাইটক্লাবগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত বছর মাত্র ১২টি নাইটক্লাবের লাইসেন্স দেওয়া হলেও সারাদেশে এ ধরনের ক্লাবের সংখ্যা অনেক বেশি।
সরকার নিহতদের স্মরণে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে।
সোমবার রাজধানী স্কোপজে’র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নীরব প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। তারা ঘোষণা করেছেন, দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে আগামী এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তারা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
নাগরিক সংগঠনগুলো মঙ্গলবার সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে, যাতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান