মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাংবিধানিক সংকট : বিতর্ক এবং উদ্বেগের ঢেউ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এবং দেশটির বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, দেশটিতে সাংবিধানিক সংকট চলছে কিনা। সম্প্রতি, ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে একটি ফেডারেল আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ উঠেছে।
মূলত, ভেনেজুয়েলার কিছু নাগরিককে, যাদের গ্যাং সদস্য হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাদের এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে এই বিতর্কের সূত্রপাত। আদালতের নির্দেশ ছিল, তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিত করতে হবে।
কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে তাদের এল সালভাদরে পাঠানো হয়েছে। এরপর এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে, যিনি ট্রাম্পের মিত্র হিসেবে পরিচিত, একটি বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেন এবং এর সঙ্গে একটি হাসির ইমোজি জুড়ে দেন।
এরপর বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, সাংবিধানিক সংকট কী, এই বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ব্যবস্থা তিনটি স্ব-নিয়ন্ত্রিত অঙ্গের ওপর ভিত্তি করে গঠিত। এই তিনটি অঙ্গ হলো – আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগ। এদের মধ্যে ক্ষমতা বিভাজন এবং একে অপরের ওপর নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে।
এই কাঠামোর মূল উদ্দেশ্য হলো, কোনো একটি বিভাগের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করা এবং সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। সংজ্ঞা অনুযায়ী, সাংবিধানিক সংকট হলো এমন একটি পরিস্থিতি, যখন সরকারের কোনো একটি অঙ্গ অন্যটির ক্ষমতাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে বা অগ্রাহ্য করে।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো নির্বাহী বিভাগ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে তাকে সাংবিধানিক সংকট হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এই বিতর্কের মধ্যে, কেউ কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি সাংবিধানিক সংকটের পর্যায়ে পড়েনি।
তাদের মতে, সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে মতবিরোধ বা ক্ষমতার দ্বন্দ্ব একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে, যদি কোনো বিভাগ আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে, তাহলে তা গুরুতর উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে বিভিন্ন সময়ে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা সাংবিধানিক কাঠামোর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। যেমন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পরেও ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল।
এছাড়া, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করতে চাওয়ার অভিযোগও উঠেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন সবার দৃষ্টি রিপাবলিকান সিনেটরদের দিকে।
কারণ, ট্রাম্প যদি আদালতের নির্দেশ অমান্য করার মতো কোনো পদক্ষেপ নেন, তাহলে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। ইতোমধ্যে কয়েকজন সিনেটর জানিয়েছেন, তারা আদালতের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করবেন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করবেন।
বিরোধী দল ডেমোক্রেটরাও বিষয়টির ওপর কড়া নজর রাখছে। মোটকথা, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন বেশ উদ্বেগজনক। বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, দেশটিতে সাংবিধানিক সংকট চলছে কিনা।
এই বিতর্কের সমাধান কী হবে, তা সময়ই বলবে। তথ্য সূত্র: সিএনএন