মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া আফগান শরণার্থীদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শরণার্থী পুনর্বাসন খাতে বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়ায় হাজার হাজার উদ্বাস্তুর জীবন এখন গভীর অনিশ্চয়তার দিকে। এর ফলে, উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে চরম মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে, যা অনেকের কাছেই অকল্পনীয়।
আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে কাজ করা অনেক সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম রাহামানি (ছদ্মনাম), যিনি কাবুলে একটি মার্কিন সাহায্যপুষ্ট মিডিয়া সংস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে বসবাস করছেন।
জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসনের তহবিল বন্ধের ঘোষণার পর থেকেই রাহামানির পরিবার আর্থিক সংকটে পড়েছে। রাহামানির পরিবারের মাসিক ভাড়া ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় ১,৮৫০ ডলারের প্রয়োজন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ লক্ষ টাকার সমান।
কাবুলে থাকার সময় তিনি এত টাকা খরচ করতেন না। নভেম্বরে পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় তারা কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের কারণে সেই সহায়তা দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। রাহামানির ভাষায়, “যদি তারা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়, তাহলে আমি কোথায় থাকব? আমার কি রাস্তায় থাকা উচিত?”
যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর শরণার্থীদের জন্য আবাসন, খাদ্য ও কর্মসংস্থান খুঁজে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই প্রক্রিয়াগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। লuthেরান সোশ্যাল সার্ভিসেস অফ দ্য ন্যাশনাল ক্যাপিটাল এরিয়া (LSSNCA) নামের একটি সংস্থা শরণার্থীদের পুনর্বাসনে কাজ করে।
তারাও এখন অর্থ সংকটে পড়েছে। সরকারি অনুদান আটকে থাকায় এই সংস্থাটি তাদের কর্মীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি অনেক কর্মী ছাঁটাইও করতে হয়েছে।
এলএসএসএনসিএ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস্টিন পেক জানিয়েছেন, উদ্বাস্তুদের জন্য ভাড়ার ব্যবস্থা করাই এখন তাদের প্রধান উদ্বেগের বিষয়। মার্চের শুরুতে তাদের তত্ত্বাবধানে থাকা অন্তত ৪২টি পরিবারকে উচ্ছেদ নোটিশ ধরানো হয়েছে। এর ফলে ভার্জিনিয়া ও মেরিল্যান্ডে প্রায় ১৭০ জন মানুষ গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
তিনি আরও জানান, “প্রতিদিন আমাদের হিসাব রাখতে হচ্ছে কত টাকা এলো, আর কাদের ভাড়া আগে দেবো। এই কঠিন সিদ্ধান্তগুলো নিতে হচ্ছে।” আফগান শরণার্থীদের এই দুর্দশার কারণ হলো ট্রাম্প প্রশাসনের শরণার্থী নীতি।
ক্ষমতায় থাকাকালীন ট্রাম্প শরণার্থীদের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদিও বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর শরণার্থী নীতিতে পরিবর্তন আসে, কিন্তু ততক্ষণে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।
আফগানিস্তান থেকে আসা অনেকেই এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের ভবিষ্যৎ কি, তা তারা জানেন না। একদিকে উদ্বাস্তু জীবনের কষ্ট, অন্যদিকে নতুন করে কাজ খুঁজে বের করার সংগ্রাম—সব মিলিয়ে তারা দিশেহারা।
অনেক শরণার্থী তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বিগ্ন। আফগান সাংবাদিক মারজিলা বাদাকশ, যিনি একসময় এলএসএসএনসিএ-তে কাজ করতেন, তার ভাষায়, “আমি ভেবেছিলাম এখানে আমার একটা স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ আছে।
কিন্তু একটি নীতির কারণে, মনে হচ্ছে আমি সেই দিনটিতে ফিরে গেছি, যেদিন প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলাম, এবং সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।” আরেকজন উদ্বাস্তু আনাস্তাসিয়া ডি জোইসা ইউক্রেন থেকে পালিয়ে এসেছেন।
তিনি এবং তার পরিবার এখন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে বসবাস করছেন। কিন্তু তাদেরও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। আনাস্তাসিয়ার আশঙ্কা, তাদের ভিসাও বাতিল হয়ে যেতে পারে।
আফগান শরণার্থীদের এই সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় কিছু সংগঠন এগিয়ে এসেছে। তারা শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। তবে তাদের পক্ষে সরকারি সাহায্যের ঘাটতি পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস