লুইজিয়ানার কয়েদি, যিনি মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায়, নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগের মাধ্যমে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়েছেন। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য আদালতের কাছে শেষ মুহূর্তে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

যদি এই আবেদন খারিজ হয়ে যায়, তবে এটি হবে লুইজিয়ানার ইতিহাসে প্রথম এবং আমেরিকার ইতিহাসে পঞ্চম ঘটনা যখন নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

জেসি হফম্যান জুনিয়র নামক এই ৪৬ বছর বয়সী কয়েদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কথা রয়েছে। তার আইনজীবীরা বলছেন, এই পদ্ধতি অসাংবিধানিক এবং নিষ্ঠুর ও অস্বাভাবিক শাস্তির বিরুদ্ধে মার্কিন সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী লঙ্ঘন করে।

তারা আরও বলছেন, এই প্রক্রিয়া হফম্যানের ধর্মীয় স্বাধীনতা, বিশেষ করে তার বৌদ্ধ ধ্যান ও শ্বাস-প্রশ্বাস চর্চার অধিকারকে খর্ব করে।

১৯৯৬ সালে নিউ অরলিন্সে ২৮ বছর বয়সী মেরি “মলি” এলিয়ট নামের এক বিজ্ঞাপন নির্বাহীকে হত্যার দায়ে হফম্যানকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। লুইজিয়ানার কর্মকর্তারা বলছেন, ১৫ বছর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত থাকার পর এখন ভুক্তভোগীর পরিবারের প্রতি ন্যায়বিচার করার সময় এসেছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল লিজ মুরিল জানিয়েছেন, তিনি আশা করছেন, এই বছর লুইজিয়ানার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কমপক্ষে চারজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

আদালতে একাধিকবার আইনি লড়াইয়ের পর, হফম্যানের আইনজীবীরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার জন্য। যদিও গত বছর আদালত নাইট্রোজেন গ্যাস প্রয়োগের মাধ্যমে হওয়া প্রথম মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে রাজি হয়নি।

সোমবার, হফম্যানের আইনজীবীরা মৃত্যুদণ্ড বন্ধ করার জন্য রাজ্য ও ফেডারেল আদালতে আরও কিছু আবেদন জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে একটি রাজ্য আদালত নতুন চ্যালেঞ্জগুলোর একটি বিবেচনা করবে।

তবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা আগে শুনানি হওয়ায় আইনজীবীদের জন্য সময়টা বেশ সংকটপূর্ণ। ১৯তম জুডিশিয়াল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক এক অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন, যা মঙ্গলবার সকাল ১০:৩০টা পর্যন্ত হফম্যানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা থেকে রাজ্যকে বিরত রাখবে।

যদিও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় নির্ধারিত আছে সন্ধ্যার দিকে, যা নিষেধাজ্ঞার আদেশের সময়সীমা অতিক্রম করে যাবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল মুরিল বলেছেন, তিনি আশা করছেন মৃত্যুদণ্ড পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যকর করা হবে এবং “অবশেষে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।” লুইজিয়ানার প্রোটোকল অনুসারে, যা আলাবামার অনুরূপ, হফম্যানকে একটি খাটিয়ায় বাঁধা হবে এবং তার মুখে একটি বিশেষ শ্বাসপ্রশ্বাসক মাস্ক পরানো হবে, যা সাধারণত পেইন্টার ও বালি শ্রমিকরা ব্যবহার করেন।

এরপর মাস্কের মাধ্যমে বিশুদ্ধ নাইট্রোজেন গ্যাস সরবরাহ করা হবে, যা তাকে শ্বাস নিতে বাধ্য করবে এবং শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।

এই গ্যাস অন্তত ১৫ মিনিটের জন্য অথবা ইসিজি-তে হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাঁচ মিনিট পর পর্যন্ত সরবরাহ করা হবে। রাজ্য সরকার বলছে, এই পদ্ধতি তুলনামূলকভাবে “বেদনাদায়ক” হবে না।

অন্যদিকে, হফম্যানের আইনজীবীরা বলছেন, এই পদ্ধতি অত্যন্ত “যন্ত্রণা-দায়ক”।

আলাবামায় নাইট্রোজেন গ্যাস ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সময়, গণমাধ্যমের সাক্ষীদের মতে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কম্পন ও শ্বাসকষ্টের মতো দৃশ্য দেখা গেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, এগুলো অক্সিজেনের অভাবে হওয়া অনিচ্ছাকৃত শারীরিক প্রতিক্রিয়া।

বর্তমানে, চারটি রাজ্য – আলাবামা, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি এবং ওকলাহোমা – নাইট্রোজেন হাইপোক্সিয়া ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমোদন দেয়।

আলাবামা গত বছর কেনেথ ইউজিন স্মিথকে মৃত্যুদণ্ড দিতে প্রথম এই গ্যাস ব্যবহার করে। ১৯৮২ সালে প্রাণঘাতী ইনজেকশন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের একটি নতুন পদ্ধতির ব্যবহার।

লুইজিয়ানার রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত আইনসভা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার জন্য গত বছর নাইট্রোজেন হাইপোক্সিয়া এবং ইলেক্ট্রোকিউশন সহ রাজ্যের অনুমোদিত পদ্ধতির তালিকা বাড়িয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আইনি লড়াই, প্রাণঘাতী ইনজেকশনের ওষুধের অভাব এবং মৃত্যুদণ্ডের প্রতি জনসমর্থন কমে যাওয়ার কারণে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে অধিকাংশ রাজ্য হয় মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে, না হয় তা স্থগিত রেখেছে।

হফম্যানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে, এই বছর যুক্তরাষ্ট্রে এটি হবে সপ্তম মৃত্যুদণ্ড।

তথ্য সূত্র: সিএনএন