শিরোনাম: পাখি গবেষণায় নারী পাখির প্রতি অবজ্ঞা: সংরক্ষণে ক্ষতি
পাখিদের নিয়ে গবেষণায়, বিশেষ করে তাদের জীবনযাত্রা ও আচরণ পর্যবেক্ষণে, পুরুষ পাখির প্রতি পক্ষপাতিত্বের এক গুরুতর চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা গেছে, বিজ্ঞানীদের এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নারী পাখিদের গুরুত্ব অনেক সময় দেওয়া হয় না।
এর ফলস্বরূপ, পাখি সংরক্ষণেও দেখা দিতে পারে বড় ধরনের সমস্যা।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পাখিবিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানী জোয়ানা উ-এর মতে, “পুরুষ পাখিরা সাধারণত উজ্জ্বল রঙের হয় এবং তাদের চিহ্নিত করা সহজ, তাই আমাদের মধ্যে তাদের প্রতি এক ধরনের অচেতন পক্ষপাতিত্ব তৈরি হয়।” এই কারণে নারী পাখিদের আচরণ, তাদের আবাসস্থল এবং প্রজনন ক্ষমতা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অজানা থেকে যায়।
এমনকি কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে, পুরুষ ও স্ত্রী পাখির মধ্যে বাহ্যিক কোনো পার্থক্য না থাকায়, তাদের নিয়ে গবেষণা করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
গবেষকরা বলছেন, এই ধরনের পক্ষপাত মানুষের ওপর করা গবেষণার মতোই। মানুষের শরীরে রোগ এবং রোগের উপসর্গের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়।
তাই উভয় লিঙ্গের মানুষের ওপর গবেষণা করাটা যেমন জরুরি, তেমনি পাখির ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষের মধ্যেকার পার্থক্যগুলো ভালোভাবে বুঝতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, গোল্ডেন-উইংড ওয়ারব্লার নামক পাখির কথা ধরা যাক।
প্রজনন মৌসুমের বাইরে, পুরুষ পাখির তুলনায় স্ত্রী পাখিরা তুলনামূলকভাবে কম উচ্চতার আবাসস্থলে বাস করে। যেহেতু মানুষের বসতি ও উন্নয়ন সাধারণত নিচু অঞ্চলে বেশি হয়, তাই এই বাসস্থানগত পার্থক্য নারী পাখিদের জন্য মারাত্মক হুমকি ডেকে আনে।
গবেষণায় দেখা গেছে, নারী গোল্ডেন-উইংড ওয়ারব্লাররা, পুরুষদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে। এর কারণ হলো, পুরুষ পাখির আবাসস্থল রক্ষার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হলেও, নারী পাখিদের আবাসস্থলের গুরুত্ব অনেক সময় উপেক্ষিত থেকে যায়।
পাখিবিজ্ঞান বিষয়ক একটি দল ‘দ্য গ্যালবার্টস প্রজেক্ট’-এর সদস্যরা এই গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খুঁজে পান। জোয়ানা উ জানান, “আমরা দেখেছি, গবেষণায় নারীদের আরও বেশি পথ পাড়ি দিতে দেখা যায়।” এছাড়াও, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্ত্রী পাখিদের তুলনায় পুরুষ পাখিদের বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পাখি যখন শীতকালে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমায়, তখন সামান্য বেশি দূরত্ব অতিক্রম করার কারণে নারী পাখিদের শিকারীর আক্রমণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে, যা তাদের জীবনহানির কারণ হতে পারে। একইসঙ্গে, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণেও নারী পাখিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এই গবেষণার প্রধান বিষয়গুলোর মধ্যে একটি হলো, নারী পাখির প্রতি মনোযোগ দিলে পাখি সংরক্ষণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নারী ও পুরুষের মধ্যেকার পার্থক্যগুলো চিহ্নিত করা জরুরি।
এছাড়া, নারী পাখিদের ভালোভাবে চিহ্নিত করার জন্য বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। রক্ত, পালক এবং ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে যেসব পাখির লিঙ্গ শনাক্ত করা কঠিন, তাদের চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
গবেষকরা বিশেষভাবে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বাইরে অন্য অঞ্চলের পাখি নিয়ে গবেষণা করার ওপর জোর দিয়েছেন। কারণ, অনেক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের পাখি সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একগামী হয়, যা নারী পাখির গান করার প্রবণতা বাড়ায়।
গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করাও খুব জরুরি।
পাখির জীবন ও আচরণ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে হলে, নারী পাখিদের প্রতি বিদ্যমান অবজ্ঞা দূর করে, তাদের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। এতে একদিকে যেমন পাখিদের সংরক্ষণ সহজ হবে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাতেও তা সহায়ক হবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক