ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিভিন্ন দেশে নাশকতামূলক কার্যকলাপ বাড়াতে অপরাধ চক্রকে ব্যবহার করছে রাশিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুলিশ সংস্থা, ইউরোপোল-এর ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাইবার হামলা, অবকাঠামো ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নাশকতার মতো ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া এবং তাদের প্রভাবাধীন দেশগুলো থেকে আসা সাইবার হামলার সংখ্যা বাড়ছে।
এছাড়া, ইউরোপের অপরাধী চক্রগুলোর সঙ্গে ‘শ্যাডো অ্যালায়েন্স’ বা ছায়ামিত্রতা তৈরি করে ‘হাইব্রিড থ্রেট’ অভিনেতারা ইইউ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। এই চক্রগুলো নাশকতামূলক কাজ, অগ্নিসংযোগ, সাইবার হামলা, তথ্য চুরি এবং মানব পাচারের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
ইউরোপোলের প্রতিবেদনে সরাসরি রাশিয়াকে ‘হাইব্রিড থ্রেট অ্যাক্টর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। তবে এতে বলা হয়েছে, রাশিয়া এবং তার প্রভাবাধীন দেশগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাইবার হামলার ঘটনা বাড়ছে।
ইউরোপোলের সদর দফতর, দ্য হেগে এক অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক কমিশনার ম্যাগনাস ব্রুনার বলেন, “বিদেশি শক্তির হয়ে কাজ করা অপরাধ চক্র– এটা একটা নতুন বিষয়।
কিছু হুমকি খুবই দ্রুত আসে, যেমন- একটি এনক্রিপ্টেড বার্তার মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক ব্যবসায়ীর হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়। আবার কিছু হুমকি আসে কয়েক দিনের মধ্যে, যেমন- রাশিয়ার অর্থায়নে আসা অভিবাসীদের একটি বাস।”
পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র উপ-সচিব ম্যাসিজ দুসজিক জানান, সম্প্রতি একটি হাসপাতালের ওপর সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে, যার কারণে কয়েক ঘণ্টার জন্য চিকিৎসা সেবা বন্ধ ছিল।
এই হামলার সঙ্গে একটি রাষ্ট্র জড়িত ছিল। এছাড়া, বেলারুশ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৭০ জন অভিবাসী পাচারের ঘটনা ঘটছে এবং এতে বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও তুরস্কের কিছু রাষ্ট্রও জড়িত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অপরাধী চক্রগুলো বর্তমানে ‘হাইব্রিড থ্রেট অ্যাক্টর’-দের হয়ে কাজ করছে এবং এর মাধ্যমে উভয় পক্ষই লাভবান হচ্ছে।
রাশিয়া অপরাধী চক্রগুলোকে ব্যবহার করে তাদের সম্পদ, দক্ষতা ও সুরক্ষা কাজে লাগাচ্ছে। অপরাধী চক্রগুলো একটি বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে, যা শুরুতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে মনে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, পানি সরবরাহ বা জ্বালানি সরবরাহ লাইনে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, ভীতি প্রদর্শন অথবা অপহরণের মতো ঘটনা ঘটানো হয়।
ইউরোপোলের মতে, এই ধরনের ঘটনাগুলো আসলে একটি বৃহত্তর কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ, যার মাধ্যমে স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়।
অনেকটা কাঠঠোকরার মতো, যে ধীরে ধীরে গাছের ক্ষতি করে। হাইব্রিড থ্রেট অ্যাক্টররা ছোট ছোট, আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ কাজ করে, যা সম্মিলিতভাবে একটি দেশের স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয়।
গত বছর বেশ কয়েকটি ইইউ সদস্য রাষ্ট্র নাশকতামূলক কার্যকলাপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
ইউরোপোলের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অনলাইন জালিয়াতি এবং সাইবার অপরাধের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ক্রমবর্ধমান ব্যবহারও উদ্বেগের কারণ।
জার্মানিতে, সামাজিক মাধ্যম এবং মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে তরুণদের প্রলুব্ধ করে সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে।
হ্যাকিং ও সাইবার হামলার জন্য তাদের ‘স্ক্রিপ্ট কিডিজ’ সরবরাহ করা হচ্ছে। ইউরোপোলের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন ডি বোলে বলেন, “অনলাইন জালিয়াতি একটি মহামারীতে পরিণত হয়েছে।”
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান