দুরারোগ্য পেশী দুর্বলতার চিকিৎসায় ব্যবহৃত জিন থেরাপির সময় এক রোগীর মৃত্যুর খবর জানিয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা সারেপটা থেরাপিউটিকস। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই কোম্পানির শেয়ারের দামে বড় পতন দেখা যায়।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসার সময় লিভারের গুরুতর জটিলতার কারণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সাধারণত এই থেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে লিভারের সমস্যা দেখা যায়, তবে রোগীর ক্ষেত্রে এর তীব্রতা ছিল অনেক বেশি।
‘এলেভিডিস’ নামের এই থেরাপি ব্যবহারের ফলে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা এটাই প্রথম। এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি বর্তমানে আটশ জনেরও বেশি রোগীর ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে।
ডুশেন মাসকুলার ডিস্ট্রফি (Duchenne muscular dystrophy) নামক বিরল, পেশী ক্ষয়ের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ২০২৩ সালে ‘এলেভিডিস’ অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই রোগে আক্রান্তদের পেশী দুর্বল হতে থাকে, যা তাদের চলাফেরার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং অনেক ক্ষেত্রে অল্প বয়সেই মৃত্যু পর্যন্ত হয়।
ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA)-এর কিছু বিজ্ঞানী এই থেরাপির কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, অনুমোদন প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করা হয়।
গত বছর এফডিএ (FDA) নির্দিষ্ট কিছু জেনেটিক মিউটেশন (genetic mutation) আছে এমন ডুশেন আক্রান্ত রোগীদের জন্য এই থেরাপির পূর্ণ অনুমোদন দেয়। এর ফলে, আগে যারা হাঁটতে পারতেন এমন কমবয়সী রোগীদের পাশাপাশি, এখন হাঁটাচলার ক্ষমতা নেই এমন ৪ বছর বা তার বেশি বয়সের রোগীদেরও এই চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
সারেপটা জানিয়েছে, মৃত রোগীর সম্প্রতি সংক্রমণ হয়েছিল, যা লিভারের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তারা ‘এলেভিডিস’-এর প্রেসক্রিপশন সংক্রান্ত তথ্যে এই ঘটনার উল্লেখ যোগ করার পরিকল্পনা করছে।
এই ঘটনার পর, ম্যাসাচুসেটসের কেমব্রিজ-ভিত্তিক কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ২৩ শতাংশের বেশি কমে যায়। বর্তমানে প্রতিটি শেয়ারের দাম প্রায় ৭৮ ডলারে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশি মুদ্রায় এই চিকিৎসার এক ডোজের দাম প্রায় ৩৫ কোটি টাকার বেশি। ‘এলেভিডিস’ পদ্ধতিতে ক্ষতিগ্রস্ত পেশী কোষে ডিস্ট্রোফিন (dystrophin) নামক প্রোটিন তৈরির জন্য একটি নিষ্ক্রিয় ভাইরাস ব্যবহার করা হয়।
২০১৬ সাল থেকে, সারেপটা আরও তিনটি ডুশেন চিকিৎসার অনুমোদন পেয়েছে। তবে, এখনো পর্যন্ত সেগুলোর কার্যকারিতা নিশ্চিত করা যায়নি।
এফডিএ-এর পূর্ণ অনুমোদনের জন্য বর্তমানে গবেষণা চলছে। ডুশেন মাসকুলার ডিস্ট্রফি (Duchenne muscular dystrophy) একটি গুরুতর রোগ।
এটি সাধারণত ছেলেদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের পেশী দুর্বল হতে শুরু করে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তোলে।
রোগের অগ্রগতিতে হাঁটাচলার ক্ষমতা হারানো, শ্বাসকষ্ট এবং হৃদরোগের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। উন্নত বিশ্বে এই রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হলেও, বাংলাদেশে এখনো এর চিকিৎসা খুবই সীমিত।
এই ঘটনায়, জিন থেরাপির নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, ভবিষ্যতে এই ধরনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আরও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস