যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ডিউক অব সাসেক্স প্রিন্স হ্যারির অভিবাসন সংক্রান্ত নথি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে। রক্ষণশীল গবেষণা সংস্থা ‘হেরিটেজ ফাউন্ডেশন’-এর করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, মঙ্গলবার (আজ) দিনের শেষ নাগাদ এই নথিগুলো জনসমক্ষে আনা হতে পারে।
হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এর আগে তথ্যের স্বাধীনতা আইনের (Freedom of Information Act) অধীনে প্রিন্স হ্যারির অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (Department of Homeland Security) প্রত্যাখ্যান করে। এরপরই তারা আদালতের দ্বারস্থ হয়।
হেরিটেজ ফাউন্ডেশন এর যুক্তি ছিল, জনসাধারণের জানার অধিকার আছে যে প্রিন্স হ্যারিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে সঠিকভাবে যাচাই করা হয়েছিল কিনা। বিশেষ করে, হ্যারির মাদক ব্যবহারের অতীত স্বীকারোক্তি নিয়ে তাদের প্রশ্ন ছিল।
কারণ, অতীতে মাদক ব্যবহারের কথা জানা গেলে ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করার সুযোগ থাকে।
হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের আইনজীবী স্যামুয়েল ডিউই (Samuel Dewey) এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তারা মূলত প্রিন্স হ্যারির মাদক ব্যবহারের বিষয়টি নিয়েই আগ্রহী, কারণ তিনি নিজেই তার আত্মজীবনীতে মাদক ব্যবহারের কথা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন।
ডিউই আরও বলেন, “প্রিন্স হ্যারি তার মাদক ব্যবহারের বিষয়ে কোনো গোপনীয়তা চান না, বরং তিনি এটি নিয়ে গর্ব করেছেন এবং তা বিক্রি করেছেন।
আদালতের নথিতে হেরিটেজ ফাউন্ডেশন জানায়, ২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রিন্স হ্যারি কয়েকটি বিশেষ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারতেন। তাদের মতে, হয়তো তিনি কূটনৈতিক ভিসা ব্যবহার করেছেন, যা রাজপরিবারের সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণে সম্ভবত ছিল না।
অথবা, তিনি অতীতে মাদক ব্যবহারের কথা স্বীকার করে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছিলেন। যদিও সাধারণত এই ধরনের অনুমতি পেতে কয়েক বছর সময় লাগে।
এছাড়া, হ্যারি মাদক ব্যবহারের কথা উল্লেখ না করেই যদি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে থাকেন, তবে তা আইনের লঙ্ঘন হতে পারে।
হেরিটেজ ফাউন্ডেশন মনে করে, প্রিন্স হ্যারির এই ধরনের আচরণ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক আইন লঙ্ঘন করেছে, যার কারণে তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হওয়ার কথা।
এই মামলার মাধ্যমে হেরিটেজ ফাউন্ডেশন আসলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইনের অমান্যতার বিষয়টি তুলে ধরতে চাইছে। তাদের মতে, এই বিভাগ ইচ্ছাকৃতভাবে দেশের অভিবাসন আইন প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ সীমান্তে সংকট তৈরি হয়েছে।
তবে, অভিবাসন আইনজীবী চার্লস কুক (Charles Kuck) মনে করেন, অভিবাসন সংক্রান্ত নথি প্রকাশ করা হলে তা উদ্বেগের কারণ হবে, কারণ এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে।
তিনি বলেন, “আমি বিস্মিত যে একটি ফেডারেল আদালত ব্যক্তিগত সংস্থাকে অন্য নাগরিকদের অভিবাসন বিষয়ক ফাইল চেয়ে আবেদন করার অনুমতি দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা বিভাগ (US Customs and Border Protection) প্রথমে হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের তথ্য অধিকার আইনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছিল, কারণ তাদের কাছে প্রিন্স হ্যারির অনুমতি ছিল না।
তবে বিচারক কার্ল নিকোলস (Carl Nichols) হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের পক্ষে রায় দিয়েছেন এবং অভিবাসন নথির কিছু অংশ প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইমিগ্রেশন আইনজীবী কুকের মতে, সম্ভবত হ্যারির গ্রিন কার্ড বাতিল করার উদ্দেশ্যে এই কাজটি করা হচ্ছে না। তিনি মনে করেন, এটি মূলত প্রচার পাওয়ার একটি কৌশল।
প্রকাশিত হতে যাওয়া নথিগুলোর মধ্যে প্রিন্স হ্যারির আই-485 ফর্ম (স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন), তার স্ত্রীর আবেদন, আর্থিক তথ্য, কাজের ইতিহাস এবং বিবাহের ছবিসহ অন্যান্য কাগজপত্র থাকতে পারে।
প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী মেগান, ডাচেস অব সাসেক্স, একজন মার্কিন নাগরিক।
আই-485 ফর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, ‘আপনি কি কখনও কোনো রাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো দেশের মাদক আইনের কোনো ধারা লঙ্ঘন করেছেন?’ এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বেশ জটিল বলে জানান আইনজীবী কুক।
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে নিউ ইয়র্ক পোস্টকে জানিয়েছেন, তিনি প্রিন্স হ্যারিকে বিতাড়িত করার কোনো পরিকল্পনা করছেন না।
বর্তমানে প্রিন্স হ্যারি তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টিসিটোতে বসবাস করছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন