কানাডার রাজনীতিতে নাটকীয় মোড়, নির্বাচনে লিবারেল পার্টির ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা
কানাডার রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্প্রতি এক অভাবনীয় পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক মাস আগেও যেখানে জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ছিলো অন্ধকারে, সেখানে এখন সবকিছু পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির নেতৃত্বে দলটি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পথে রয়েছে।
জানুয়ারিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জরিপ সংস্থাগুলো যখন ট্রুডোর দলের খারাপ ফল নিয়ে আলোচনা করছিল, তখন কেউ হয়তো কল্পনাও করতে পারেনি এমনটা ঘটবে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন।
তিনটি ভিন্ন সংস্থার জরিপ বলছে, লিবারেল পার্টি নির্বাচনে ভালো ফল করবে এবং সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে। এমনকি নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রভাবও বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফিলিপ ফোরিয়ারের ওয়েবসাইট ‘338Canada’ নিয়মিতভাবে কানাডার বিভিন্ন জরিপ বিশ্লেষণ করে নির্বাচনের পূর্বাভাস দিয়ে থাকে। তার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, জানুয়ারিতে লিবারেল পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল এক শতাংশেরও কম।
কিন্তু এখন সেই সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ শতাংশে।
গত দুই বছর ধরে বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়েলিভ্রে কার্বন ট্যাক্স এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর অজনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে জয়ের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন, কনজারভেটিভ পার্টি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে।
এক বছরের বেশি সময় ধরে তাদের জয়ের সম্ভাবনা ছিল প্রায় ৯৯ শতাংশ।
কিন্তু ট্রাম্পের কিছু মন্তব্য পরিস্থিতি বদলে দেয়।
জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগ এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডার উপর প্রভাব বিস্তারের হুমকি সবকিছু ওলট-পালট করে দেয়।
সম্প্রতি ‘দ্য ওয়ালরাস’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ফোরিয়ার কনজারভেটিভ পার্টির সম্ভাব্য বিপর্যয় সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। তার মতে, দলটির জয়ের সম্ভাবনা ১৫ শতাংশে নেমে এসেছিল এবং তারা “কানাডার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভোটের ব্যবধানে জয়ের সুযোগ হারানোর ঝুঁকিতে ছিল”।
বর্তমানে প্রায় সব জরিপেই লিবারেল পার্টির প্রতি জনসমর্থন বাড়ছে দেখা যাচ্ছে। এর বিপরীতে কনজারভেটিভ পার্টি এবং বামপন্থী নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) জনপ্রিয়তা কমছে।
যদি নির্বাচনের ফলাফলে জরিপের এই পূর্বাভাস সত্যি হয়, তাহলে এনডিপি পার্লামেন্টে তাদের আসন হারাতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এরিক গ্রেনিয়ার বলেন, “কানাডার ইতিহাসে এত অল্প সময়ে এমন বড় পরিবর্তন খুব কমই দেখা গেছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জনমত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি বড় ভূমিকা রেখেছে।
বিশেষ করে, বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কায় যখন ট্রুডো কানাডার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য জোরালো বক্তব্য রাখেন, তখন তার জনপ্রিয়তা বাড়ে।
ট্রুডোর পদত্যাগের সময় তার প্রতি সমর্থন ছিল ৪৭ শতাংশ, যা তার আগের সর্বনিম্ন ২২ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি।
অন্যদিকে, কনজারভেটিভ নেতা পয়েলিভ্রে ট্রাম্পের মতো জনপ্রিয়তাবাদী কৌশল অবলম্বন করে সুবিধা পেতে চেয়েছিলে।
কিন্তু ট্রুডো এবং কার্বন ট্যাক্স ইস্যুতে সুবিধা করতে না পারায় তার দল এখন কিছুটা কোণঠাসা।
অ্যাঙ্গাস রেইড ইনস্টিটিউটের এক জরিপে দেখা গেছে, বাণিজ্য যুদ্ধ এবং কানাডার অর্থনীতির ভবিষ্যতের প্রশ্নে কার্নিকে পয়েলিভরের চেয়ে বেশি যোগ্য মনে করেন দেশটির মানুষ।
৪১ শতাংশ মানুষ মনে করেন কার্নি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে উপযুক্ত, যেখানে পয়েলিভরের পক্ষে মত দিয়েছেন ২৯ শতাংশ।
সবকিছু মিলিয়ে, নির্বাচনের ফল যদি জরিপের পূর্বাভাস অনুযায়ী হয়, তবে মাত্র কয়েক মাস আগেও দুর্বল অবস্থানে থাকা লিবারেল পার্টি চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে পারে, তাও আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান