গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নারী ও শিশুসহ নিহত ৪ শতাধিক, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা
গত কয়েকদিনে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে পাঁচ শতাধিক মানুষ।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজায় পরিস্থিতি ‘ভূ-স্বর্গ’-এর পরিবর্তে ‘নরক’-এ পরিণত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে স্বজনদের খুঁজে বের করতে মরিয়া সাধারণ মানুষ।
হাসপাতালগুলোতে আহতদের আর্তনাদ আর নিহতদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘরের দৃশ্য হৃদয়বিদারক।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানাচ্ছে, নিহতদের মধ্যে বহু পরিবারের সবাই নিহত হয়েছে। উত্তর গাজার একটি আবাসিক এলাকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন মানবাধিকার সংস্থা ইউরো-মেডিটেরানিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের চেয়ারম্যান রামি আবদুর বোন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন—নেস্রিন, তাঁর ছেলে ও মেয়েরা—ওবাইদা, ওমর ও লিয়ান, ওবাইদার স্ত্রী মালাক এবং তাঁদের সন্তান সিওয়ার ও মোহাম্মদ। রামি আবদু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘ইসরায়েল আমাদের ইচ্ছামতো হত্যা করতে পারে, পুড়িয়ে মারতে পারে, ছিন্নভিন্ন করতে পারে, কিন্তু আমাদের ভূমি থেকে তারা কখনোই উৎখাত করতে পারবে না।
ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা একদিন আসবেই—সেটা যত দিনই লাগুক।’
গাজা শহরের আল-রান্তিসি চিলড্রেনস হাসপাতালের কাছে ইসরায়েলি হামলায় আহতদের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আল-জাজিরা তা যাচাই করেছে।
রামি আবদুর পরিবারের মৃত্যুর আধা ঘণ্টার মধ্যেই রাফায় জাতিসংঘের একটি ক্লিনিকে কর্মরত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাজদা আবু আকের ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিহত হন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন একটি তিন দিনের শিশুও।
খান ইউনিসের আল-মাওয়াসিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ১৫ জন। এই এলাকাটিকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ‘মানবিক করিডোর’ ঘোষণা করেছিল, কিন্তু তারপরও সেখানে হামলা চালানো হয়।
খান ইউনিসের আবাসন এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয় একটি পরিবারের ছয় সদস্য। তাঁদের বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।
খান ইউনিসে ইসরায়েলি বোমায় নিহত হয় দুই শিশু—বিসান ও আইমান। তাঁদের ফুফু হেবা আল- হিন্দি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘প্রিয় শিশুরা, আল্লাহ তোমাদের প্রতি রহম করুন এবং মা-বাবাকে ধৈর্য্য ধারণের ক্ষমতা দিন।’
গাজার একজন নারী কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘আমার সন্তানেরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা গেছে। আল্লাহর কসম, তারা সেহরির খাবার পায়নি। আমার মেয়ে রোজা রেখে সেহরি ছাড়াই মারা গেছে।’
তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমি একজন মা, আমার বুক পুড়ে যাচ্ছে। আল্লাহ তোমার বাচ্চাদের জন্য তোমার বুকও পুড়িয়ে দিক।’
এদিকে, গাজার জাবালিয়ায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত স্বজনের দেহের খণ্ডাংশ গাছের সাথে পাওয়া গেছে।
জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলা চলছে।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৪৮ হাজার ৫শ ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজারের বেশি।
ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে আটকা পড়ায় মৃতের সংখ্যা ৬০ হাজারের বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা