জার্মানিতে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশাল অংকের ব্যয়ের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট। মঙ্গলবার বুন্দেসটাগে (জার্মান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ) এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়, যার ফলে কয়েক দশক ধরে জার্মানির যে আর্থিক রক্ষণশীলতা ছিল, তার অবসান হতে চলেছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ইউরোপের বৃহত্তম এই অর্থনীতির দেশকে নতুন করে সাজাতে এবং সামরিক খাতে ব্যয় বাড়াতে কয়েক শত বিলিয়ন ইউরোর তহবিল গঠন করা হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়াকে মোকাবিলা করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তনের কারণে ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের সামরিক শক্তি বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরেই চাপের মধ্যে ছিল। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে নেওয়া কিছু নীতির কারণে ইউরোপের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
তাই নিজেদের সুরক্ষায় এখন থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
এই প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) ও সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)। নির্বাচনের পর এই দুই দল মিলে একটি জোট সরকার গঠনের আলোচনা চালাচ্ছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের জন্য ৫০০ বিলিয়ন ইউরোর (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৫৯ লাখ কোটি বাংলাদেশি টাকা) একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হবে। এছাড়া, সামরিক খাতে বেশি অর্থ ব্যয় করার জন্য সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ঋণের সীমা শিথিল করারও পরিকল্পনা রয়েছে।
জার্মান আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রস্তাবটির পক্ষে সমর্থন জানিয়ে সিডিইউ নেতা মার্জ বলেন, “আমরা অন্তত এক দশক ধরে এক ধরনের মিথ্যা নিরাপত্তা অনুভব করেছি।
আজকের এই সিদ্ধান্ত, যা প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির সঙ্গে সম্পর্কিত, তা নতুন ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা সম্প্রদায়ের দিকে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ।”
তবে, এই বিলটি এখনো বুন্দেসরাটে (জার্মান পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ) অনুমোদন হতে বাকি। সেখানকার অনুমোদন পাওয়ার জন্য বাভারিয়ান ফ্রি ভোটার্স-এর সমর্থন প্রয়োজন।
আগামী ২৫শে মার্চ থেকে নতুন বুন্দেসটাগের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নতুন সংসদে চরম ডান ও চরম বামপন্থী আইনপ্রণেতাদের সংখ্যা বাড়তে পারে।
তাই তাদের বিরোধিতার কারণে বিলটি আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই কারণে দ্রুত বিলটি পাস করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
মার্জ বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দ্রুত পরিবর্তনশীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, ইউরোপ এখন “আগ্রাসী রাশিয়া” এবং “অপ্রত্যাশিত যুক্তরাষ্ট্র”-এর মুখোমুখি।
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি এটা পরিষ্কার করতে চাই যে, ট্রান্স-আটলান্টিক সহযোগিতা বজায় রাখতে আমরা যা করতে পারি, তার সবকিছুই করতে চাই। তবে একই সঙ্গে আমাদের ইউরোপে নিজেদের কাজটিও করতে হবে।
আমাদের শক্তিশালী হতে হবে এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। জার্মানির এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।”
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা