গাজায় নতুন করে বিমান হামলার ঘটনাকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ক্ষমতা ধরে রাখার কৌশল হিসেবে দেখছেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের অভিযোগ, নেতানিয়াহু ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল করতে এবং নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য এই হামলা চালিয়েছেন।
মঙ্গলবার গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়েছে। বিক্ষোভকারীদের একজন, সাবেক নৌ কর্মকর্তা ওরা পেলেড নাকাস বলেন, “বাস্তবতা হল, এই হামলাকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা এর বিরুদ্ধে কথা বলছে, তাদের গণতন্ত্রবিরোধী হিসেবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।”
সম্প্রতি নেতানিয়াহু ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেটের প্রধানকে বরখাস্ত করতে চেয়েছিলেন, যা নজিরবিহীন পদক্ষেপ ছিল। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি সম্ভবত বেআইনি। এর পরই বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়।
এদিকে, হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলিদের পরিবারের সদস্যরাও বিক্ষোভের পরিকল্পনা করছেন। তাদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। যাদের স্বজন গাজায় নিহত হয়েছেন, তাদের একজন আয়েলেট সভাটজকি বলেন, “যারা এখনও বন্দী রয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব। নেতানিয়াহু কখনোই শান্তি চাইবেন না। তার এই অবিরাম যুদ্ধ কোথায় গিয়ে শেষ হবে?”
তিনি আরও বলেন, “তাদের (বন্দীদের) ফিরিয়ে আনা এখনো সম্ভব। যারা মারা গেছেন, তাদের সম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে এনে দাফন করা হোক। আমাদের যুদ্ধবিরতি ও আলোচনার টেবিলে ফিরতে হবে এবং তাদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমেই তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব। দয়া করে অন্য কোনো পরিবারকে আমার মতো একই পরিণতি ভোগ করতে দেবেন না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নেতানিয়াহুকে আগামী কয়েক সপ্তাহ ইসরায়েলি পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভোটগুলোতে জয়লাভের জন্য ডানপন্থী মিত্রদের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু এই মিত্ররা গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের ঘোর বিরোধী। এমনকি জানুয়ারিতে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতিবাদে পদত্যাগ করা কট্টর ডানপন্থী সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির মঙ্গলবার আবার সরকারে যোগ দিয়েছেন।
অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলছে এবং দোষী সাব্যস্ত হলে তার কারাদণ্ড হতে পারে। মঙ্গলবার আদালত নেতানিয়াহুর একটি শুনানিতে “যুদ্ধের কারণে” অনুপস্থিত থাকার আবেদন মঞ্জুর করেছেন বলেও জানা গেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাস হামলা এবং গাজায় যুদ্ধের কারণ অনুসন্ধানে শিন বেট সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে হামলার দায় স্বীকারের পাশাপাশি নেতানিয়াহুর নীতির সমালোচনা করা হয়েছে। সংস্থাটি বর্তমানে নেতানিয়াহুর সহযোগীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে।
তাদের বিরুদ্ধে বিদেশি গণমাধ্যমে গোপন নথি সরবরাহ এবং কাতার থেকে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। কাতার দীর্ঘদিন ধরে গাজায় হামাসকে আর্থিক সহায়তা জুগিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিকসহ প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে অপহরণ করা হয়। এরপর ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৯,০০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
এখনও গাজায় ৫৯ জন ইসরায়েলি বন্দী রয়েছে, যাদের অর্ধেকের বেশি ইতোমধ্যে মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান