গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় আবারও ১৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যু, ভাঙল যুদ্ধবিরতি চুক্তি। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় বুধবার ভোরে ও রাতে অন্তত ১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এর আগের দিন ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছিলেন আরও চার শতাধিক ফিলিস্তিনি। হামলায় নারী ও শিশুসহ সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলে খান ইউনিস ও রাফাহ এবং উত্তরাঞ্চলে গাজা শহরের সাবরা এলাকায় ইসরায়েল এই হামলা চালায়। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য তৈরি করা তাঁবুগুলোতেও আঘাত হানা হয়েছে, যেখানে এক মা ও শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা গাজার উত্তরে ‘হামাসের সামরিক স্থাপনায়’ আঘাত হেনেছে।
গত ১৯শে জানুয়ারি থেকে হামাসের সঙ্গে হওয়া একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি ভেঙে মঙ্গলবার গাজায় ব্যাপক বোমা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর একদিনেই নিহত হয় ৪ শতাধিক ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই ছিল শিশু।
গাজার মধ্যাঞ্চলে দেইর আল-বালাহ এলাকার একটি মসজিদের কাছে একটি বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া, বুরেইজ শরণার্থী শিবিরের পূর্বে ইসরায়েলি হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও আর্টিলারি শেলিংয়ের খবর পাওয়া গেছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি দেইর আল-বালাহ থেকে জানান, ইসরায়েলের অবরোধের মধ্যে গাজার মানুষ ‘ভীত, অসহায় ও বিপর্যস্ত’। তিনি আরও বলেন, ‘লোকজন অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। তাদের খাবার নেই।
যে জল শোধনাগারটি ৫ লক্ষ ফিলিস্তিনির জন্য জল সরবরাহ করত, সেটিও ইসরায়েলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কারণে কাজ করছে না।’
মঙ্গলবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় বোমা হামলাকে ‘কেবল শুরু’ উল্লেখ করে বলেন, ইসরায়েল তাদের যুদ্ধ জয়ের লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাবে।
তাদের লক্ষ্য হলো হামাসকে ধ্বংস করা এবং সব বন্দীকে মুক্ত করা।
মঙ্গলবারকের এই হামলায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আমি হতবাক’। চীনের ইউরোপীয় দূত ফু কং যুদ্ধবিরতি ভেঙে যা হয়েছে, তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন আইনপ্রণেতাও ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলের বিরোধী দলের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি গাজায় যুদ্ধ পুনরায় শুরু করার জন্য সরকারের সমালোচনা করে বলেন, তাদের কোনো ‘সীমা’ নেই।
বুধবার এক টুইটে লাপিদ লেখেন, ‘পুরো জাতিকে একত্রিত হয়ে বলতে হবে: যথেষ্ট হয়েছে!’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি আপনাদের সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি—এই মুহূর্ত আমাদের, ভবিষ্যৎ আমাদের, দেশ আমাদের। রাস্তায় নামুন!’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাজার হাজার ইসরায়েলি তেল আবিবের একটি চত্বরে জড়ো হয়ে সরকারের কাছে বন্দী মুক্তির আলোচনার পুনরায় শুরুর দাবি জানায়। গাজায় বন্দী ইসরায়েলিদের পরিবারের প্রধান সংগঠন সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ‘পরিকল্পিতভাবে ভেঙে দেওয়ার’ অভিযোগ এনেছে।
এনাভ জাংওকার, যার ছেলে বন্দীদের মধ্যে একজন, বলেন, ‘আজ নেতানিয়াহু হামাসের ওপর নরকের দরজা খোলেননি। তিনি আমাদের প্রিয়জনদের ওপর নরকের দরজা খুলেছেন।’
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা