মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা এবং মুদ্রাস্ফীতির উদ্বেগের মধ্যে দেশটির অর্থনীতিতে সম্ভাব্য মন্দা বা ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর (Stagflation) সৃষ্টি হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, ফেডারেল রিজার্ভ বা ফেডারেল ব্যাংক (ফেড)-এর নীতিনির্ধারকদের জন্য কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি পরিবর্তনের কারণে এই সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ব অর্থনীতিবিদরা।
বিশেষ করে এর প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।
ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের মতে, ট্রাম্পের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ, যেমন বাণিজ্য নীতি পরিবর্তন, কর্মী ছাঁটাই এবং অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি—এগুলো আমেরিকান ভোক্তা, ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে। এর ফলস্বরূপ, প্রধান শেয়ার সূচকগুলোতেও বড় ধরনের পতন দেখা যাচ্ছে।
একই সময়ে, ভোক্তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক আস্থা কমে গেছে, যা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ। বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভবিষ্যতে সুদের হার বাড়ানোর মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি শুধু পণ্যের দাম বাড়াবে তাই নয়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে নতুন শুল্ক হার বিশ্ব অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেবে, যা মানুষের আয় এবং নিয়মিত কর রাজস্বের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ট্রাম্প প্রশাসন যদি বিদেশি পণ্য ও পরিষেবার ওপর শুল্ক আরোপ অব্যাহত রাখে, তবে এর পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে অন্যান্য দেশও একই পদক্ষেপ নিতে পারে, যা বাণিজ্য যুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি কমে যাওয়া এবং মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশটির মানুষের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ এই পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবিলা করবে, সেদিকে এখন সবার নজর।
কারণ, মার্কিন অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হলো ভোক্তারা। কিন্তু তাদের মধ্যে যদি ব্যয়ের প্রবণতা কমে যায়, তবে তা অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত।
এছাড়াও, মানুষের মধ্যে যদি এমন ধারণা জন্মায় যে ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে, তাহলে তারা তাদের ব্যয়ের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ফেডারেল রিজার্ভের পক্ষে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ রয়েছে। কারণ, এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে।
অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ অর্থ পাঠান, সেই রেমিট্যান্সের পরিমাণও কমে যেতে পারে, যদি সেখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা। সরকারকে এখন থেকেই পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে দেশের অর্থনীতি এই সংকট ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন