ইউরোপে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে বিশাল অঙ্কের ঋণ গ্রহণের পরিকল্পনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ২০৩০ সালের মধ্যে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, যার মূল কারণ হিসেবে রাশিয়াকে নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউরোপীয় কমিশন ঘোষণা করেছে, তারা প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ১৭ লক্ষ কোটি টাকার বেশি) ঋণ সংগ্রহ করবে। এই অর্থ দিয়ে সামরিক সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্র কেনা হবে। তবে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং ইউরোপীয় উৎপাদকদের উৎসাহিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ইইউ চাইছে তাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলো যেন ইউরোপ, নরওয়ে ও ইউক্রেনের সরবরাহকারীদের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনে। এই প্রকল্পের আওতায়, ইইউ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারবে সদস্য রাষ্ট্রগুলো।
তবে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, সামরিক সরঞ্জামের ৬৫ শতাংশ ইইউ, নরওয়ে অথবা ইউক্রেনের সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কিনতে হবে। নিরাপত্তা চুক্তিতে আবদ্ধ না হলে, এই প্রকল্পের আওতায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের কোম্পানিগুলো কাজ পাওয়ার সুযোগ পাবে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান, কজা কাল্লাস সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা কঠিন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। ইউরোপের মাটিতে যুদ্ধ চলছে এবং এটি একটি অস্তিত্বের সংকট। পরিস্থিতি খুবই গুরুতর।” ডেনমার্কের গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে, ন্যাটো দুর্বল মনে করলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে রাশিয়া ইউরোপে বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু করতে পারে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে সামরিক সক্ষমতা অর্জনের অর্থ হলো “বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক শক্তি তৈরি করা এবং কৌশলগত সুবিধা অর্জনের জন্য একটি শক্তিশালী শিল্প ভিত্তি গড়ে তোলা।”
প্রস্তাবিত এই ‘ইউরোপীয় ক্রয়’ পদ্ধতির কারণে ফ্রান্স লাভবান হবে বলে মনে করা হচ্ছে, তবে পোল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো এতে আপত্তি জানাতে পারে। অনেক দেশ বৃহত্তর ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্প চায়, তবে সামরিক ব্যয়ের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের বিরোধিতা করে।
ইইউ নেতারা তাদের আসন্ন সম্মেলনে এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের মনোভাব নিয়েও ভিন্নতা রয়েছে। ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাশিয়া নীতির পরিবর্তনের কারণে ইউরোপের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা মনে করছেন, নতুন এই প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ৯০ লক্ষ কোটি টাকার বেশি) প্রয়োজন। এর মধ্যে ১৫০ বিলিয়ন ইউরো আসবে ইইউ-র ঋণ থেকে এবং বাকি অর্থ সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের নিজস্ব বাজেট থেকে সরবরাহ করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর্মকর্তারা মনে করেন, রাশিয়া ভবিষ্যতে ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য একটি প্রধান হুমকি হিসেবে থাকবে। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান